বাঙালি জাতির জন্ম ইতিহাস বঙ্গবন্ধু শব্দের অভ্যন্তরেই নিহিত : উপসচিব তরিকুল

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 294 দর্শন

 

আজ ১৭ মার্চ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মদিন।
১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। হাজার বছরের শৃঙ্খলিত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশা নিয়ে জন্ম নিয়েছিল মুজিব নামের এক দেদীপ্যমান আলোক শিখা। যাঁর জন্মের সঙ্গে একটি জাতির ভাগ্যে লেখা হয় মুক্তির সনদ। সময়ের আবর্তে খোকা’ই হয়ে উঠেছিলেন বাঙালীর মুক্তির দিশারী। দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, জনকল্যাণে আত্মত্যাগের বলিষ্ট নেতৃত্বের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বিশ্ব ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে স্ব-মহিমায় রাজনীতিকের বিশ্বমঞ্চে ঠাঁই পেয়েছেন।
সারা বিশ্ব দেখেছে, সেই শিশুই একদিন মুক্তির চেতনার মশাল হাতে বাঙালি জাতিকে পথ দেখান, এনে দেন স্বাধীনতা।
বাঙালি জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা ও অবনতমস্তকে স্মরণ করছে সেই মহামানবকে, যার হাত ধরে এই ভূখণ্ডে রচিত হয়েছে বিস্ময়কর এক ইতিহাস, হাজার বছরের পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে নতুন এক রাষ্ট্র। লেখার শুরুতেই আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা,
বাংগালীর নিরন্তন প্রেরনার চিরন্তন উৎস,স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি,শতাব্দীর মহানায়ক, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি।

টুঙ্গীপাড়ার অজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে উঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী, হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানসিকতা, গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের দুঃখ দূর করার প্রতিজ্ঞা তাঁকে রাজনীতিতে নিয়ে আসে। স্কুল থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপরই শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পৃষ্ঠা নং ২১) থেকে জানা যায়, রাজনীতির প্রতি প্রবল ঝোঁক থাকায় তাঁর বাবা তাঁকে বলেছিলেন, বাবা রাজনীতি কর আপত্তি করব না, পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এতো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতে ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রেখ ” Sincerity of purpose and honesty of purpose ” থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না। একথা কোনোদিন আমি ভুলি নাই। এই কথা বিশ্বাসের কারণেই তিনি রাজনীতিতে সফল হয়েছিলেন।

দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে যখন পাকিস্তানের জন্ম হয় তখনই তিনি বুঝতে পারেন এই রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে বাঙালিরা নির্যাতিত-নিষ্পেষিত হবে, বাঙালি আসলে স্বাধীনতা লাভ করেনি, ঔপনিবেশিক শাসনের হাতবদল হয়েছে মাত্র। কারন জন্মলগ্ন থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে দমন-পীড়ন করা, এদেশের সম্পদ আত্মস্যাৎ করে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা, এ দেশের মানুষকে শোষণ ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। তাই তিনি ১৯৪৮ সালে নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে ছাত্রলীগ গঠন করেন, ১৯৪৯ সালে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী নিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমেই শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা হয়
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এর মহান ভাষা আন্দোলনে, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র জনতা তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়, ১৯৭০ সালের সারাধণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে উল্টো বাঙালির অধিকার হরণ করতে নানা রকম দমন-পীড়ন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দেন। ৭ই মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বলেছিলেন ” আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি এ দেশের মানুষের অধিকার চাই “। বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছিলেন, যেখানে তিনি ঘোষণা করেন:

” এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম “!

বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন, জেগে ওঠে নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির সময়ের এই সাহসী সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । বাঙালি জাতির ২০০ বছরের পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী বাঙালীর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র জনযুদ্ধের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অর্জিত হয়েছিল মহামূল্যবান স্বাধীনতা। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বাঙালী জাতি অর্জন করে তাদের হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন, প্রিয় স্বাধীনতা। বংগবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

প্রসংগত উল্লেখ্য যে, নেতাজী সুভাষ বোসের একটা উক্তি মনে পড়ছে ‘Give me blood, I will give you Independence.’ ভারতবাসী রক্ত দিয়েছিল, নেতাজী স্বাধীনতা দিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ফকির মজনু শাহের আখড়া থেকে সিপাই বিদ্রোহের দেয়াল টপকে, নজরুলের কারার লৌহ কপাট ভেঙ্গে, রবীন্দ্রনাথের বাঁধভাঙ্গার আহ্বানে নেতৃত্ব দিয়ে উচ্চারণ করলেন : – ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। তিনি মানুষকে মুক্ত করে ছেড়েছেন, জাতিরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে।

তাই শেখ মুজিব শুধু একটি নাম নয়, একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী চেতনা। ৪৭ থেকে ৭১ বাঙালির যা অর্জন তার পরতে পরতে রয়েছে বংগবন্ধুর ত্যাগ,সংগ্রাম, আদর্শ,সততা আর বাঙালির প্রতি গভীর ভালোবাসা। বাংলাদেশ আর শেখ মুজিবুর রহমান কে আলাদা করা যাবে না। শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছে সেই সোনার কাঠি, যা বাংগালী নামক ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়েছিল। বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মহান স্থপতি। বলতে পারি:

Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman is not just a mere individual or a name, it’s a history . He is an institutio, A movement, A revolution, An upsurge. He is the architect of the nation. He is the essence of epic poetry and he is history. He is the undisputed leader of the Bengali nation and the father of the greatest Bengali nation of all time “.

ইতিহাসে প্রথম বারের মতো বাঙালি একট্টা হয়েছিল বংগবন্ধুর নেতৃত্বে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ম্যাকব্রাইড যথার্থই বলেছেন, ” Bangabandhu Sheikh Mujib was the soul of his nation”. মহাজাগরন তৈরি করে বাঙালি কে এক কাতারে নিয়ে আসা সহজ কাজ ছিল না। এক লহমায় এটি হয়নি। দীর্ঘ, কণ্টকাকীর্ণ পথ বেয়ে ভয়ানক ঝুকিপূর্ণ ও দূরূহ এ চ্যালেন্জ সম্পন্ন হয়েছে।

বিদেশি লেখক রন্জন তাঁর গ্রন্হে লিখেছেন, দেশে দেশে নেতা অনেকেই জন্মান। কেউ ইতিহাসে একটি পংক্তি, কেউ একটা পাতা, কেউবা অধ্যায়। কিন্তু কেউ আবার সমগ্র ইতিহাস। শেখ মুজিবুর রহমান এই সমগ্র ইতিহাস, সারা বাংলার ইতিহাস। তাই, ১৭ মার্চ বংগবন্ধুর জন্ম না হলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না। গভীর দেশপ্রেম, সীমাহীন আত্মত্যাগ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কালজয়ী নেতৃত্বে ও জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে। তাঁর জন্যই বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্ম হয়। নি:সন্দেহে বলতে পারি:

” Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman was the only one born in the thousand-year history of Bengal. He was the greatest son of the soil and greatest Bengali for thousands of years, the great hero of history and the father of the nation, has made the dream of Bengal a reality and gave the people an independent Bangladesh. Under his unwavering leadership, the Bengali nation fought to the death and snatched victory. The defeated Pakistani rulers were compelled to leave/free Bangladesh under the leadership of Bangabandhu ”

বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, বঙ্গবন্ধু একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, রাষ্ট্রের স্থপতি, স্বাধীনতার প্রতীক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর সম্পদ নন। বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিকামী মানুষের স্লোগানের নাম শেখ মুজিব। বাঙালি জাতির চেতনার ধমনিতে প্রবাহিত শুদ্ধতম নাম শেখ মুজিব। তিনি চিরন্তন-চিরঞ্জীব; বাঙালির প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে অবিনাশী চেতনার নাম শেখ মুজিব। তিনি বাঙালি জাতির কাছে স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের মহানায়ক, পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির মহান পথপ্রদর্শক, আবহমান বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ। তিনি বাঙালির অসীম সাহসীকতার প্রতীক সমগ্র বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর।

১৯৭৫ পরবর্তী আমার জন্ম হওয়ায় ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে নিঃসংকোচে ও দ্বিধাহীনচিত্তে বলতে পারি,
” একজন সন্তানের সাথে পিতার সম্পর্ক যেমন থাকে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক “। কারণ দীর্ঘ সাধনায় বাঙালির মানসলোকে বংগবন্ধু সঞ্চার করেছেন স্বাধীনতার বাসনা। উপনিবেশ-শৃঙ্খলিত একটি ঘুমন্ত জাতিকে তিনি জাগ্রত করেছেন,
পুরো বদ্বীপকে তিনি জাগিয়ে তুলেছেন, কিংবা বলি তার স্পর্শে পুরো দেশ জেগে উঠেছে- এ কারণেই তিনি বঙ্গবন্ধু। একজন বঙ্গবন্ধুর তর্জনীই একটা নিদ্রিত জাতির বুকে সাহস সঞ্চার করিয়ে বাঘের গর্জন দিয়ে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই সংগ্রাম করতে শিখিয়েছিল। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে বৃহৎ পরাশক্তিকেও যে কাবু করে দেয়া যায়, বাঙালিদের সেই কৌশলই শিক্ষা দিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের ছোট্ট সেই খোকা। তাইতো কবির ভাষায় বলতে চাই:

” হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি হে ক্ষণজন্মা নেতা,
তোমার জন্যই পেয়েছি মোরা প্রাণের স্বাধীনতা।
তুমি না হলে বাংলাদেশ হতোনা হে চিরঞ্জীব নেতা,
তাই বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একই সুতোই গাঁথা “।

আর বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু দুটি শব্দ যেন একে অপরের পরিপূরক যা আজ ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত,একটি ছাড়া অন্যটি যেন মূল্যহীন।বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠায় ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সকল সংগ্রাম ও আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী মহানায়ক বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে ” মুজিব বাংলার আর বাংলা মুজিবের ” অথবা অন্যভাবে বলা যায় ” বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ, বাংলাদেশই বঙ্গবন্ধু “। তাই দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারিঃ

” Bangabandhu and Bangladesh are indeed synonymous. They are two sides of the same coin. One cannot be separated from the other, One cannot be imagined without the other & even one could not have existed without the other.
Independent Bangladesh is the result of Bangabandhu Sheikh Mujib’s immense sacrifice. There would have been no Bangladesh hadn’t Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman been born “.

যে মহান নেতা বিশ্ব রাজনীতিকে কাঁপিয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার মোহনবাঁশিতে জাদুকরী সুর তুলে হেমিলনের বংশীবাদকের ন্যায় এই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক মোহনায় নিয়ে এসেছিলেন, দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক, জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের – তিনিই তো বাঙালি জাতির পিতা। যে মহান নেতা আজীবন সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, যে মহান নেতা তার জীবনের মায়া ত্যাগ করে যৌবনের সোনালী সময়ে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন, যে মহান নেতা ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে থাকার পরও বাঙালির স্বাধীনতার প্রশ্নে কখনোই আপস করেননি, যে মহান নেতা বাঙালির স্বাধীনতার জন্য হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে যেতে প্রস্তুত ছিলেন,
যে মহান নেতা ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও গেয়েছেন বাংলা, বাঙালি আর বাংলাদেশের জয়গান, যে মহান নেতা ফাঁসির সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হচ্ছে জেনেও বাঙালির স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল ও অনড়, যে মহান নেতা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে যার নাম চিরভাস্বর, যে মহান নেতা প্রতিষ্ঠা করেছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ —
তিনিই তো জাতির পিতা।

হঠাৎ ক্ষমতার পালাবদলে বাঙালির নেতা হননি শেখ মুজিব। শোষিত বাঙালির মুক্তির ভরসাস্থল হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার প্রতিটি সোপানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪ বছর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থেকেছেন, ২ বার ফাঁসির মঞ্চে হয়েছেন মৃত্যুর মুখোমুখি। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকারের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি। বরং আত্মত্যাগ ও ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। তিনি কর্মী থেকে নেতা, নেতা থেকে জননেতা, জননেতা থেকে দেশনেতা হয়েছেন। দেশনেতা থেকে হয়েছেন জাতির জনক ও বিশ্বনেতা ।

But it is important to understand Sheikh Mujibur Rahman did not become Bangabandhu overnight and greatness was not thrust upon him. Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman was not born with a silver spoon in his mouth. He struggled hard and made great sacrifices to rise to fame and become the Father of the Nation of the newly created state of Bangladesh in 1971. The story of his life, the triumphs and the tragedies thus intermingle with that of the creation of Bangladesh ” .

শিশু দিবস: বাঙালি তাদের এই মহামানব, কালজয়ী নেতাকে স্মরণ রাখতে ১৯৯৭ সাল থেকে তার জন্মদিনে প্রতি বছরের ১৭ মার্চ পালন করেন জাতীয় শিশু দিবস। ” স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন ’ এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে এবছর বংগবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরা আগামী পৃথিবীর কর্ণধার এবং শিশুদের মধ্যেই ঘুমিয়ে আছে ভবিষৎ পৃথিবীর বিপুল সম্ভাবনা। তিনি শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন, তিনি বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। আজকের তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বংগবন্ধুর অবদান, তাঁর দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাস , বাঙালির প্রতি গভীর ভালবাসা সম্পর্কে জানতে এবং জাতির পিতার জীবনাদর্শ থেকেই দেশ গড়ার অনুপ্রেরণা লাভ করবে — এই উদ্দেশ্যেই জাতির পিতার জন্মদিন কে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আজকের শিশুরাই হবে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের সারথি। শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে পারলে তারাই স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে অগ্রনী ভুমিকা পালন করবে।

৭১ এর অগ্নিঝরা দিনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানি জল্লাদরা কারাবন্দি রেখে কবর খুঁড়েও যাকে হত্যা করার সাহস পায়নি, অথচ স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় সেই হিমালয়সম ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মা নরপিশাচ ঘাতকরা হত্যা করে ক্ষমতার পালাবদল করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের হয়ে কাজ করা ঘাতকচক্রের বুলেটে সেদিন ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের হৃৎপিন্ড।এরপর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারার মূল্যবোধের বিস্তার ঘটানোর পাঁয়তারা চালায় এবং শুরু হয় দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত দিকে নিয়ে যাওয়ার পালা। ১৯৭৫-পরবর্তী ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা হয়েছে কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়েছে। তার সংগ্রাম ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য তা মুছে ফেলতে পারেনি।

এর পরের ঘটনা আরও বেশি অবিশ্বাস্য। যে মানুষগুলো বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে তাদেরকে যেন বিচার করা না যায় সে জন্যে সংসদে ইনডেমনিটি বিল পাস করে সেটি সংবিধানে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। মানব সভ্যতার ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীদের কেউ স্পর্শ করা যাবে না সেটি সংবিধান দিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে এরকম ঘটনা কি পৃথিবীর কোনো মানুষের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব ? শুধু কি তাই ! অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বঙ্গবন্ধুর নামটি বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া শুরু হলো।

ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক। তাই ইতিহাস বিকৃত আর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবে না। ইতিহাস দেয় না তেমন কিছু করতে। ইতিহাস নিজের অঙ্গ নিজে করে না ছেদন। ইতিহাস কারও নির্দেশে রচিত হয় না। ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতেই চলে। ইতিহাসের সত্য রক্ষার খাতিরে ইতিহাসই বঙ্গবন্ধুকে ধরে রাখবে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাঙালি জাতির পিতা ও এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ— এগুলো সবই মীমাংসিত বিষয়। এগুলো নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নাই, নিরপেক্ষতার কোনো সুযোগ নেই, কোনো প্রকার আপোষের ‍সুযোগ নেই। বরং আমি মনে করি, জীবিত বংগবন্ধু থেকে মৃত বংগবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী। তিনি ছিলেন- তিনি আছেন, তিনি থাকবেন বাঙালির ভাবনায়-চেতনায়-বিশ্বাসে, তিনি আমাদের প্রতিটি অণু-পরমাণুর অংশীদার।যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে তাদের মাঝেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন। সৈয়দ শামসুল হকের ভাষায়:

“যেখানে ঘুমিয়ে আছো, শুয়ে থাকো বাঙালির মহান জনক

তোমার সৌরভ দাও, দাও শুধু প্রিয়কণ্ঠ শৌর্য আর অমিত সাহস

টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামগুলো তোমার সাহস নেবে,
নেবে ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা ”

বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক কালজয়ী অধ্যায়। যতদিন পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন বাঙালির ইতিহাস থাকবে, যতদিন পদ্মা -মেঘনা-যমুনায় স্রোতধারা বহমান থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু থাকবেন অমর-অবিনশ্বর এবং বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হবে সর্বত্র। স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান চিত্রায়িত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণেই। বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির স্বগর্ব উপস্থিতিই স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে। কবির ভাষায়ঃ

তুমি জন্মেছিলে বলে, জন্মেছে এ দেশ,
মুজিব তোমার আরেক নাম স্বাধীন বাংলাদেশ “!

পরিশেষে বলতে চাই, আজকের ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে এই যে আয়োজন, আলোচনা তখনই সফল হবে ,যখন বঙ্গবন্ধুর যে জীবন আদর্শ– সেই জীবন আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমরা ধারন করতে পারবো, লালন করতে পারবো ও বহন করতে পারবো। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলা ও বাঙালি যতদিন থাকবে, এ পৃথিবী যতদিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যতদিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু একইভাবে প্রজ্বলিত হবেন এবং হবেনই ইনশাআল্লাহ প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী ও শান্তিকামীর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে- পথ দেখাবে। বাংলার স্বাধীনতা, ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালিরূপে বঙ্গবন্ধু থাকবেন চিরজাগ্রত। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।

যতই মিথ্যাচার আর ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা করা হোক না কেন, আমি শুধু বলতে চাই মহাকালের মহানায়ক কখনো যে বিস্মৃত হওয়ার নয় এবং কালের যাত্রার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে প্রতিনিয়ত সোচ্চার উচ্চারণে জাগ্রত থাকেন, মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন তারই অনিন্দ্যসুন্দর উপমা– তিনি যে মৃত্যুঞ্জয়ী, চির অমলীন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশের জন্য বংগবন্ধুর সুমহান আত্মত্যাগের ইতিহাস জেনে / পড়ে নতুন শপথে বলীয়ান হবে, দেশকে ভালবাসবে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা, বঙ্গবন্ধুর শোণিতের উত্তরাধিকার যাঁর ধমনীতে, বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম যাঁর হৃদয়ে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যাঁর সত্ত্বায়, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, বাংলাদেশ সরকারের সফলতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর যাদুকরী নেতৃত্বে জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের ” ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ” বিনির্মাণে ব্রতী হবে– এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে, জাতির পিতার প্রতি আবারও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপনপূর্বক আমার পছন্দের একটি কবিতার উক্তি দিয়ে শেষ করছি:

” যে তুমি শিখিয়েছিলে মুক্তির জয়গান
যে তুমি শিখিয়েছিলে শিকল ভাঙার গান
শ্রদ্ধাভরে আজ তোমারে স্মরি, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা, গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান “!

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ।

লেখক: আ,ন,ম তরিকুল ইসলাম,প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপসচিব),
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও সাবেক নেতা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন