মোবাইল সদৃশ একটি যন্ত্র, যা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোনো সময় যেকোনো অজ্ঞাত অপরাধী কিংবা ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব। অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ওআইভিএস) নামের একটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহজেই বহনযোগ্য ডিভাইসটি দিয়ে এখন ঘটনাস্থলে থেকেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট), জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্মতারিখ ব্যবহার করে জানা যাচ্ছে ব্যক্তির পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য। আর এই ডিভাইস ব্যবহার করে আরও সক্ষম ও সাফল্য বয়ে আনছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এই সংস্থাটি।
সম্প্রতি এ বিষয়ে আলাপচারিতায় নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীরাও নানা কৌশল অবলম্বন করছে। আগে কোনো ঘটনা ঘটলে আলামত সংগ্রহ করে তা নিকটস্থ র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকৃত আলামত যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর শনাক্ত করতে হতো। যাতে অনেকটাই সময়ক্ষেপণ হতো।
‘বর্তমানে ওআইভিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনাস্থল থেকে ব্যক্তির আলামত সংগ্রহ করে (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) দ্রুততম সময়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে অপরাধ তদন্তে আরও গতি বাড়ছে।’
তার মতে, অপরাধী শনাক্তের জন্য সহজে বহনযোগ্য এই ডিভাইসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ডিভাইসটির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র, অপরাধীদের ডাটাবেজ ও কারাগারের ডাটাবেজের তথ্য পাওয়া যাবে। এতে কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রবেশ করালে ওই ব্যক্তির থাকা তথ্য আমরা দেখতে পাবো।
‘এতে করে নিমিষেই জানা সম্ভব হবে, হত্যাকাণ্ডের শিকার কিংবা হত্যাকাণ্ডে জড়িত বা অপরাধমূলক যে কোনও কাজের সাথে ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা,’ বলেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
র্যাব জানায়, নতুন এই ডিভাইসের মাধ্যমে শুধু অপরাধী শনাক্তই নয়, বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হচ্ছে। আধুনিক এই ডিভাইসটি ব্যবহার শুরুর প্রায় ৪ মাসের মাথায় ১০টির বেশি ঘটনায় সাফল্য পাওয়া গেছে।
পাসপোর্ট, বিআরটিএ এবং পুলিশের ডাটাবেজের তথ্য ওআইভিএস ডিভাইসটির মাধ্যমে পাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
র্যাবের কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা আশা করছি, এই ডাটাবেজগুলোর তথ্য আমরা পাবো। এ ব্যাপারে কাজ চলছে।
এদিকে ওআইভিএস ডিভাইস ব্যবহারে অপরাধী শনাক্তসহ অজ্ঞাতনামা ভুক্তভোগীর পরিচয় নিশ্চিতে র্যাবের সাফল্যের গল্প অনেক বলে জানিয়েছেন বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খাইরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ডিভাইসটি সারাদেশের ১৫টি ব্যাটালিয়নে কার্যকর রয়েছে। এটি পরিচালনার জন্য দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডাররা ডিভাইসটি পরিচালনা করছেন।
এ বিষয়ে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বলেন, ওআইভিএস ডিভাইসটি র্যাবে কর্মরত এএসপি পদমর্যাদা থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাদের নিজস্ব আইডি দিয়ে পরিচালনা করতে পারবেন।
যে কেউ কোনো ধরনের অপতৎপরতামূলক কাজে যেন ডিভাইসটি ব্যবহারের সুযোগ না পায় সেজন্য ডিভাইসটির সুরক্ষা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।