মনিরুজ্জামান মনির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগ থেকে স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়েছেন। মানিকগঞ্জে জন্ম হলেও বড় হয়েছেন ঢাকায়। বাবার চাকরির সুবাদে তিনি থেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে। ক্যাম্পাসকে খুব কাছ থেকে দেখায় মনেপ্রাণে এখানেই পড়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন পূরণ করেই তিনি আইন বিভাগে অনার্সে ৩.৫১ সিজিপিএ নিয়ে তাঁর ব্যাচের প্রথম স্থান অর্জন করেন। এই সাফল্যের জন্য তিনি ‘ব্যারিস্টার নোরা শরীফ গোল্ড মেডেল’ পান। তাঁর শিক্ষক ও বন্ধুদের মতে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের গর্ব।
ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা লেখাপড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন মনিরকে। তাঁদের ইচ্ছা ছিল ছেলে আইন বিশেষজ্ঞ হবে। সেই উৎসাহ নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতি ক্লাসেই প্রথম স্থান অর্জন করেন। যা তার পড়াশোনা প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় আবদুর রাজ্জাক ইসলামিয়া মাদ্রাসার মানবিক বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫.০০ ও ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় নটর ডেম কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫.০০ পান এবং ঢাকা বোর্ডে ২৫তম হন।
স্বপ্নের ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ‘খ’ ইউনিটে ৬৯তম স্থান অর্জন করেন। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘নটর ডেম কলেজের পড়াশোনার স্টাইল ও তাঁর অধ্যাবসায় তাঁকে ঢাবিতে চান্সে সহায়তা করেছে।’
আইন বিভাগের নবীনবরণের দিন থেকেই তিনি বিভাগে ভালো ফলাফলের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাচের মধ্যে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করেন। তিনি বলেন, মূলত প্রত্যেক শিক্ষকের উৎসাহ ও নিজের প্রচেষ্টার পাশাপাশি আইনের বিভিন্ন জার্নাল, কেস, রিপোর্ট পড়ার অভ্যাস তাঁর ভালো রেজাল্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
শুধু লেখাপড়াই নয়, স্কুল পর্যায় থেকেই খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পারদর্শী ছিলেন মনিরুজ্জামান। স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। জুরিস্ট ইউনিটি অব জিয়া হলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি জিয়া হল ডিবেটিং ক্লাবের সদস্য।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করেন মনির। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ঢাবির টিম ‘বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল টিম’ হিসেবে নির্বাচিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান বাংলাদেশ অংশ নেয়।
২০১৫ সালে ভারতের দিল্লিতে ‘ইয়ুথ ডেলিগেশন’ প্রোগ্রামে বাংলাদেশ থেকে ১০০ জনের একটি প্রতিনিধিদল যায়, যেখানে মনিরুজ্জামান আইন বিভাগকে প্রতিনিধিত্ব করেন। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নিমন্ত্রণে তাঁরা রাষ্ট্রপতির ভবনে যান। এটা তাঁর জীবনের বড় একটা অর্জন বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ‘ফিলিপ সি জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল’ মুট কোর্ট’ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৮৯ দেশের ১৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে তাঁদের টিম ‘সেরা উদীয়মান টিম’ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
মনির ২০১৫ সালে মানিকগঞ্জে ১৬তম সামার স্কুল প্রতিযোগিতায় ‘বেস্ট একাডেমিক অ্যাকসিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পান। দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
মুনির ছবি দেখেন, বই পড়েন এবং গান শুনতে পছন্দ করেন।
মনিরুজ্জামানের ইচ্ছা ভবিষ্যতে আইন বিশেষজ্ঞ হওয়ার। সে জন্য তিনি যুক্তরাজ্যে উচ্চতর পড়াশোনা করতে চান। আর বিশেষজ্ঞ হয়ে আইনের জটিল বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করতে চান।