রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপন হত্যার ঘটনায় একজন চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তার ওই চিকিৎসকের নাম আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জাতীয় স্বাস্থ্য ও মানসিক ইনিস্টিউট হাসপাতালের রেজিস্ট্রার। সরকারি হাসপাতালের রেজিস্ট্রার হলেও কমিশনের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এ মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে চাইবে বলে জানানো হয়েছে।
ডিসি হারুন বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি শিপন হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার এফআইআরভুক্ত ১৫ জনের মধ্যে আমরা ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারকৃত ১২ জনের মধ্যে চারজন এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে শিপন হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত, কারা ইন্ধন দিয়েছে এবং কাদের যোগসাজশে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কারা সরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে মাইন্ড হাসপাতালে এএসপি শিপনকে নিয়ে গেছে সবকিছু উঠে এসেছে। তাদের বক্তব্যেই নাম আসে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনের। আজ সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে আদাবর থানা পুলিশ।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ আল মামুন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার। তার অধীনেই সিনিয়র এএসপি শিপন চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এএসপি শিপনকে বেডে শিফট করা, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বসিয়ে রাখেন। পরে একটা বেডে তাকে শুইয়ে দিয়ে ইনজেকশন পুশ করেন। এএসপি শিপন ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তিনি ফোন করেন মাইন্ড এইড হাসপাতালে। তার এখানে চিকিৎসা হবে না মর্মে ওই মাইন্ড হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেন।
গত ৯ নভেম্বর বেলা ১১টায় আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালটির কর্মচারীদের মারধরে মারা যান পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন। সেই মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মাইন্ড এইড হাসপাতালের ম্যানেজার আদালতে উল্লেখ করেন, সরকারি মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনই তাকে প্রথমে ফোন করেন বলেন, ‘আমি একটা রোগী পাঠাচ্ছি।’
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার থাকার কথা থাকলেও তিনি মূলত বেসরকারি তিনটি হাসপাতালে পার্টটাইম জব করেন। রোগী দেখেন। এগুলো হলো টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিক, এইড ওয়েল ও আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতাল।
ডিসি হারুন আরও বলেন, আদাবরের ওই হাসপাতালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। এমন একটি হাসপাতালে তিনি কীভাবে চিকিৎসা করান তা জানতে চাইলে তিনি পুলিশকে জানান অন্যরা যেভাবে করেন তিনিও সেভাবে করেন। সরকারি হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ও চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী স্থানান্তর করলেন- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব তিনি পুলিশকে দিতে পারেননি।
ডিসি হারুন বলেন, মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর ডা. মামুন ছুটে যান ওই হাসপাতালে। নিজের দায় এড়ানোর জন্য মৃত্যুর সংবাদ জেনেও এএসপি শিপনকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠান। আমরা জেনেছি, মাইন্ড এইড হাসপাতালে দালাল রোগী পাঠালে কমিশন পান ১০ শতাংশ। তবে তিনি পান ৩০ শতাংশ। ডা. মামুনের এ ধরনের অপতৎপরতা শুধু চিকিৎসার নামে প্রতারণা নয়, শিপন হত্যাকাণ্ডে তার দায় কোনোভাবে তিনি এড়াতে পারেন না। এ জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।