শেখ আরিফুল ইসলাম আশা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্ক সংকেত পাওয়া মাত্রই গ্রহণ করে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রথমেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করে। খুলে দেওয়া হয় জেলার সকল আশ্রয় কেন্দ্র। স্কুল কলেজ মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ভারত সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে দফায় দফায় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় করেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্ক বার্তা উপকূলে ছড়িয়ে দিয়েছেন যথা সময়ে। মাইকিং করেছেন মসজিদে মসজিদে। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বারবার তুলে ধরেছেন আবহাওয়া বার্তা ও প্রস্তুতিমূলক সব তথ্য।
মানুষ যাতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেতে কষ্ট না পায় সেজন্য পুলিশ, বিজিবি, আনসার, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। প্রবল বর্ষণকে উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার মাঠে নেমে পড়েন। শুধু তাই নয়, জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে পৃথক টিম গঠন করেন। উপজেলা প্রশাসনকে একেকটি ইউনিট করে জেলায় ৭টি ইউনিটে মনিটরিং সেল গঠন করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে নদীর বাঁধ ও বাড়িঘরের অবস্থা সরেজমিন অবলোকন করে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জেলার শ্যামনগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যান।
সেখানে সাধারণ ঝড় আতঙ্ক মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল নিরাপদ আশ্রয় ও সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থানের জন্য জেলাবাসিকে অনুরোধ জানিয়ে উপজেলা ভিত্তিক কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল ফোন নাম্বার জনস্বার্থে প্রচার করেন। যাতে কোন মানুষ হয়রানী বা কষ্ট না পায়। জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার সকল মাছ ধরা ট্রলারকে নিরাপদে থাকার আহ্বান জানান। চাল ও নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন অসহায় মানুষকে। বৈরি আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত অসহায় মানুষকে নিরাপদে নির্বিঘ্নে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। দুর্যোগকালীন সময়ে তিনি যখন যেখানে যা দরকার তা গ্রহণ করতে বিলম্ব করেননি। দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করেন। যে কারণে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে সক্ষম হয়। দিন-রাত এক প্রকার নির্ঘুম থেকে তিনি জেলাবাসির মনে সাহস যুগিয়েছে। তার এই সাহসী পদক্ষেপে প্রাণহানি ছাড়াই বিদায় হয় ঘুর্ণিঝড় বুলবুল।
দুর্যোগ পরবর্তী বুলবুলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত সাতক্ষীরাকে গড়তে তিনি নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদ ও অসহায় মানুষের সাহায্যে এখনো নিবেদিত থেকেই আরো একবার সাতক্ষীরা বাসীর কাছে নিজেকে এক অনন্য মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।