বৎসর দুই আগে সাতক্ষীরা পিএন স্কুল এন্ড কলেজের সন্মেলন কক্ষে ১৯৬৮ সালের এসএসসি ব্যাচদের নিয়ে একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত পুনর্মিলনী অনুুুুুুুুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালিক সুপ্রিম কোর্টের বিঞ্জ বিচারপতি এইচ এম নুরুল হুদা জায়দীর দার।অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম প্রধান ফজলুর রহমান।অনুষ্ঠানে আমাকে ইনভাইট করেছিলেন আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন চাচা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন যুগ্ম প্রধান ফজলুর রহমান।ঐ অনুষ্ঠানটি আমি আমার আপডেট সাতক্ষীরা পেইজ থেকে ফেইজবুক লাইভ থেকে সম্প্রচার করেছিলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির কথা গুলো আমি মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম আর লাইভ করছিলাম।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তার ব্যক্তব্যে বার বার বলতেছিলো যে সাতক্ষীরায় নতুন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তভা কামাল খুবই ইয়াং ম্যান তার সাথে কথা বলে মনে হলো তিনি সাতক্ষীরার মানুষের জন্য কাজ করতে চান। বিচারপতি তার ব্যক্তবে আরো বলেছিলেন, নতুন ডিসি কে খুব উদ্যোমী ও পরিশ্রমী মনে হলো। আপনারা তার কাছ থেকে কিছু করে নেন।। বিচারপতি'র কথা গুলো শুনে মনে হয়েছিলো মনে হচ্ছিলো বিচারপতি আর জেলা প্রশাসক একই জেলার লোক নতুবা তারা একই ইউনিভারসিটি তে পড়তো। তানাহলে নতুন জেলা প্রশাসকের এতো প্রশংসা করবেন কেনো তিনি। কিন্তু যত দিন যায়, যত মাস যায় দেখি সেই বিচারপতির কথাই খেটে যায়।
জেলা প্রশাসক এত বেশি পরিমান উন্নয়ন মুলক কাজ করেছেন সে সেটি আন কাউন্টেবল নাউন এর মত। যেটার পরিমান গুনে পারা মুশকিল।জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরায় যোগদানের পর থেকেই তিনি সাতক্ষীরা জেলা কে ক্লিন সাতক্ষীরা, গ্রিন সাতক্ষীরা হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন।তিনি চেয়েছিলেন সাতক্ষীরা শহরের রাস্তায় কোনো ময়লা আবর্জনা থাকবেনা।এ লক্ষে তিনি প্রতিদিন সকালে প্রাণ সায়ের খালের পাস দিয়ে হাটতেন আর চলার পথে যেসব আবর্জনা দেখতেন সেগুলো নিজে হাতে তুলে একটা ডাস্টবিনে বা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে রাখতেন। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক প্রত্যেক সাতক্ষীরা পৌর মেয়র কে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরার প্রাণ সায়ের খালের আবর্জনা পরিস্কার করার পদক্ষেপ হাতে নিলেন। নিজের হাতে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে জেলা প্রশাসক নেমে পড়লেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে। প্রাণ সায়ের খাল পরিস্কার করার পাসাপাসি জেলা প্রশাসক শহরের প্রত্যেকটি দোকানের সামনে, জেলার প্রতিটি সরকারী - বেসরকাারী অফিসের সামনে একটি করে প্লাস্টিকের বাস্কেট দিলেন এবং সেই বাস্কেট বা প্লাস্টিকের ঝুড়িতে সবাইকে আবর্জনা ফেরার আহবান জানালেন।
এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের আহবানে সাড়া দিয়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও তাদের স্কুলের ক্যাম্পাস পরিষ্কার করতে শুরু করলো। জেলা প্রশাসক এবিষয়ে এতটাই সিরিয়াস ছিলেন যে অফিস থেকে রাতে বাড়ি ফেরার পথে তিনি শহরের বিভিন্ন দোকান-পাটের সামনে কোনো আবর্জনা দেখলেই তিনি গাড়ি থেকে নেমে সেটি তুলে ফেলতেন এবং যে দোকানের সামনে আবর্জনা থাকতো সেই দোকান মালিক কে কড়া করে ধমক দিতেন।জেলা প্রশাসকের নিরালস চেষ্টায় ফিরে আসলো পরিচ্ছন্নতার শহর সাতক্ষীরা।
জেলা প্রশাসকের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চলতে চলতে সাতক্ষীরায় চলে আমলো ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব । এডিস মশার কারনে ডেঙ্গুজর হয় বলে জেলা প্রশাসক ডেঙ্গু মশার বংশ বিস্তার ঠেকাতে নেমে পড়েন মাঠে।ডেঙ্গু ঠেকাতে জেলা প্রশাসক প্রতিটি উপজেলায় কমিটি করে দেন নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি। শহরের প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশা নিধোন মেশিনের সাহায্যে জেলা প্রশাসক ঔষধ ছিটিয়েছেন।পরিস্থিতি এমন হয়ে গেলো যে রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে এমন জিনিস ডাবের খোলা,ছাদের উপর,টায়ারের ভিতরে, ফুলের টবে ইত্যাদি জিনিস গুলো সম্পর্কে জনগণ কে সচেতন করতে জেলা প্রশাসক কখনো হ্যান্ড মাইক নিয়ে আবার কখনো লিফলেট নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় সচেতনতা মুলক প্রচারণা চালিয়েছেন।
ডেঙ্গু নির্মুল হওয়ার পরপর ই সাতক্ষীরা তে আঘাত হানলো ঘূণীঝড় বুলবুলি। বিধ্বস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় হীন হয়ে পড়লো। জেলা প্রশাসক তখন বার বার সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছেন কিভাবে এ ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। জেলা প্রশাসক নির্বাহী অফিসার ও সরকারী কর্মকর্তাদের সকল ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দিলেন। আশ্রয়হীন মানুষদের কে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আনলেন ও আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষদের কে খুচুড়ি রান্না করে খেতে দিয়েছেন। এসময় সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম(বার) ও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন বুলবুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাসে দাড়িয়ে ও তাদের কে শুকনা খাবার সহযোগীতা করে। ভালো কথা ঘূর্ণীঝড় যেতে না যেতেই নতুন করে প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসলো সাতক্ষীরা ঘূর্ণীঝড় আম্পান।
আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। পুরো জেলার রাস্তায় বড় বড় গাছ পড়ে রান্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে গিছিলো। পরে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা জেলার সকল থানার পুলিশ ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই রাস্তার সকল গাছ রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। সে সময় মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সাতক্ষীরায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত দের মাঝে চাল-ডাল-টিন ও নগত অর্থ পাঠিয়েছিলেন জেলা প্রশাসকের নিকট।পরে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী ও গৃহ নির্মানের টিন পৌছে দিয়েছিলেন।
ঘূণীঝড় আম্পান যেতে না যেতে সাতক্ষীরায় চলে আসলো করোনা মহামারি। জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ করোনা ঠেকাতে যা করেছেন সাতক্ষীরার মানুষের জন্য তা আজীবন ইতিহাস হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।করোনায় লক ডাউন নিশ্চিত করতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। করোনায় কোয়েন্টাইন নিশ্চিত করা সহ বাহিরের জেলার মানুষ এজেলায় প্রবেশ বন্ধে রাত দিন কাজ করেছে সাতক্ষীরা ডিসি ও এসপি। শুধু তাই নয় লক ডাউনে কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম(বার)। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত যারা চাইতে লজ্জা পান এমন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। একি ভাবে সাতক্ষীরা র পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইলের এসএমস পেয়ে মধ্যবিত্ত দের বাড়িতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি র মাধ্যমে খবার পৌছে দিয়েছেন।
পবিত্র রমজান মাসে জেলা প্রশাসক ভ্রাম্যমান ইফতার বাজার চালু করেন শহের মোড়ে মোড়ে। এছাড়া জেলা প্রশাসক "নো প্রফিট নো লস "নামক ভ্রাম্যমান কাঁচা বাজারের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করেছেন।তাছাড়া করোনা কালে ঘরে থাকা শিশুদের জন্য অন লাইন কুইস প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
প্রতি বুধবার জেলা প্রশাসকের গনশুনানীতে আসতো অসংখ্য সমাস্যা গ্রস্ত মানুষ। জেলা প্রশাসক সংশ্রিষ্ট উপজেলার নির্বাহী অফিসার কে বলে সমস্যা গ্রস্ত ব্যক্তিদের সমস্যা সমাধান করে দিতেন।
মানবিক জেলা প্রশাসক হিসাবে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। কোনো মেধামী শিক্ষার্থী টাকার অভাবে বই খাতা কিনতে পারছেনা, বা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে চিকিৎসা করার টাকা নেই এমন শত শত মানুষকে আর্থিক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তফাা কামাল। এছাড়া প্রতিবন্ধি শিশুদের প্রায় প্রায় জেলা প্রশাসক হুইল চেয়ার উপহার দিতেন।
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি তে সাতক্ষীরা ব্রক্ষ্মরাজপুর সহ পুরাতন সাতক্ষীরার বদ্দীপুর এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়লে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থলে যান পরিদর্শনে। সেখানে গিয়ে জেলা প্রশাসক সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরীর মাধ্যমে জলাবদ্ধ এলাকায় ৬ টি পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি সেচের কাজ আরম্ব করেন। পরে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে থাকলে জেলা প্রশাসক অনুধাবন করতে পারলেন শহরে জলাবদ্ধতার কারন হচ্ছে প্রাণ সায়ের খাল ছোট। খালটি খনন করে বৃষ্টির পানি বের করে দেওযার ব্যবস্থা করতে হবে। তানাহলে পৌরবাসীকে পানির মধ্যেই বসবাস করতে হবে।
পরে জেলা প্রশাসক প্রাণ সায়ের খাল খনন করতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট হতে বড় অংকের বরাদ্ধ নিয়ে আসেন এবং খাল খননের কাজ শুরু করেন। কিন্তু খাল খননে বাধা হয়ে দাড়ায় খালের পাসে থাকা অবৈধ স্থাপনা সমূহ। পরে জেলা প্রশাসক সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে প্রাণ সায়ের খালের পাসে অবস্থিত সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।
প্রায় ৮-৯ দিন উচ্ছেদ অভিযান শেষে সাতক্ষীরা প্রাণ সায়ের খাল এখন প্রাণ ফিরে পেতে চলেছে।শত বাধাবিপত্তি কাটিয়ে সাতক্ষীরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল প্রাণ সায়ের খালের পাসে অবস্থিত সকল অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। পাসাপাশি সাতক্ষীরা প্রাণ সায়ের খাল কে একটি নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর লেকে পরিনত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাণ সায়ের ফিরে পাবে তার হারানো প্রাণ। সর্বোপরি বলতে পারি কথা রেখেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।
লেখক : নিয়াজ ওয়াহিদ
সিটিজেন জার্নালিস্ট, সাতক্ষীরা ও প্রকাশক আপডেট সাতক্ষীরা ডটকম।