রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই ইনস্টিটিউটে টিকাদান কর্মক্রম শুরু হয়।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে ইনস্টিটিউটের তৃতীয় তলায় স্থাপিত টিকাদান বুথে প্রথম টিকা নেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের পর স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, অর্থ বিভাগের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম টিকা নেন। তাঁদের পরে অন্যদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
টিকা নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, এই টিকার কোনো সমস্যা নেই। টিকা নেওয়ার পর তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি। তাঁর সঙ্গে অন্য যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদেরও কোনো অসুবিধা হয়নি।
প্রটোকল অনুযায়ী সবাইকে টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ ছাড়া টিকা নেওয়ার বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।
অপর দুই সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও আবদুর রউফ তালুকদারও সবাইকে টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, আজ এই ইনস্টিটিউটে ৯০ জনের মতো ব্যক্তির টিকা নেওয়ার কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে টিকা নিতে আসেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক। তিনি টিকা নেওয়ার পর বয়স্কদের টিকা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
টিকা দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে টিকাদান-পরবর্তী কক্ষ বা পোস্ট ভ্যাকসিনেশন রুম আছে।
আজ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরু হয়েছে। সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ১ হাজার ৫টি হাসপাতাল থেকে আজ করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
শুরুর দিন ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে নিবন্ধন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। গতকাল শনিবার পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ।
সরকারের কাছে ৭০ লাখ টিকা আছে। এর ২০ লাখ টিকা ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে। বাকি ৫০ লাখ টিকা সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কিনেছে। এই টিকা ৩৫ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে।
দেশব্যাপী সুষ্ঠুভাবে করোনার টিকা বিতরণ ও প্রয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি জাতীয় পরিকল্পনা করেছে। টিকাদানকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ও জেলায় জেলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় স্থায়ী সমাধান এনে দিতে পারে টিকা।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওই দিন ২১ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হয়। এর পরদিন রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে ৫৪৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, টিকা নেওয়া ৫৬৭ জনই সুস্থ আছেন। কারও বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
আজ টিকাদান শুরু হয়ে তা কত দিন চলতে থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সরকারি কর্মকর্তারা। গত মাসে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, প্রতি মাসে দুই সপ্তাহ ধরে টিকা দেওয়া হবে, সরকারি ছুটির দিন ছাড়া। তবে গতকাল মহাপরিচালক বলেছেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমরা টিকা দিতে থাকব।’