খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা হয়। এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে সাত দিনব্যাপী মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলা আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধন করেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও সেবাসমূহ তুলে ধরতে মেলায় বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি ১১০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের নিয়ে কেককাটার পর বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, কেডিএ’র চেয়ারম্যান ব্রিগে. জেনারেল এসএম মিরাজুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর কবির ও সরদার মাহবুবার রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে ৫০টি জাতীয় পতাকা সম্বলিত সুবর্ণজয়ন্তী র্যালি খুলনার নয়টি উপজেলা প্রদক্ষিণের উদ্দেশ্যে বের হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ সুবর্ণজয়ন্তী র্যালিতে নেতৃত্ব দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ সুসজ্জিত তিনটি ট্রাকে করে বিভিন্ন উপজেলা প্রদক্ষিণ শেষে ২৩ মার্চ মেলা প্রাঙ্গণে এসে র্যালি শেষ করবেন। ঐ দিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা জানানো হবে।
এর আগে সকাল আটটায় বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা জেলা ও মহানগর কমান্ড, কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন,
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, রেঞ্জ ডিআইজি ড. খ: মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার
, জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান,
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উপসচিব আসাদুজ্জামান সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগসহ স্কুল-কলেজ, পেশাজীবী সংগঠন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শিশু একাডেমির উদ্যোগে শিশুদের অংশগ্রহণে রচনা, চিত্রাংকন ও কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের আদর্শকে ধারণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনায় প্রতিফলনের লক্ষ্যে স্কুলে শিশুদের নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবস উপলক্ষ্যে হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার ও এতিমখানায় বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। বাদযোহর বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ-মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মুজিববর্ষ উদযাপনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদি দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনাসমূহ সজ্জিতকরণ এবং মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহে সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরভবনে আলোচনা সভা, কেককাটা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণ করা হয়। জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বড় আকারের এলইডি স্ক্রিনে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ওপর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সপ্তাহব্যাপী জেলা ও উপজেলাসমূহে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পুস্তক প্রদর্শণী এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা হয়।
সকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠান বিটিভি’র সহায়তায় সরাসরি প্রদর্শন ও প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।