বদলে যাচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। দুর্নীতি যখন বদলে যাওয়া দেশের প্রধান অন্তরায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান যখন জিরো টলারেন্স ঠিক এমনই সময় মাত্র ১শ টাকার বিনিময়ে পুলিশের মত গুরুত্বপূর্ণ চাকুরি পেল খুলনার পাইকগাছা এলাকার এক এতিম যুবক।
বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা পুলিশ সুপার জনাব এস এম শফিউল্লাহ বিপিএম এর মাধ্যমে পুলিশের কনেস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী জেলার পাইকগাছা উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবকের পুলিশে চাকুরি হয়।চাকুরী পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে একজন এতিম যুবক বলেন, আমার বাবা-মা আমাকে ৩ বৎসর বয়সে ফেলে রেখে চলে গেছেন।আমি আমার দাদার বাড়িতে বড় হয়েছি।আমার মত এতিমের ১০০ টাকায় যে চাকুরী হবে সেটা আমি কোন দিন কল্পনাও করি নি।
চাকুরী পাওয়া অপর একজন প্রার্থীর বাবা পুলিশ সুপার কে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন,আমি সিটি কর্পারেশন এর একজন নাইট গার্ড।আমার ঘরনেই বাড়ি নেই লোকের বাড়িতে বাড়া থাকি।আমার ছেলের যে বিনা ঘুষে চাকুরী হবে এটা আমি কোন দিন ভাবিনি। অপর এক প্রার্থী পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন,আমার পিতা একজন ভ্যান চালক।তিনি অনেক কষ্ট করে আমাকে এই পর্যন্ত বড় করেছেন।আমি মাইকে ১০০ টাকায় পুলিশের চাকুরী হবে এমন প্রচার শুনে পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আর পুলিশ সুপারের মহানুভবতায় আমি ১০৩ টাকা খরচ করে পুলিশ কনস্টেবলেে চাকুরী পেয়েছি।
পুলিশের এ ধরণের ব্যতিক্রমী নিয়োগ দেশে এটিই প্রথম উল্লেখ করে যাদের চাকুরি হয়েছে তাদের পরিবার সহ সাধারণ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট।ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু, খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ ও থানার ওসি এমদাদুল হককে। অনেকেই বলছেন পুলিশের মতন গুরুত্বপূর্ণ পদে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়াই ব্যতিক্রমী এ নিয়োগ প্রদান করায় এক দিকে সরকারের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
অপর দিকে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। অনেকেই বলছেন পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পুলিশ সুপার কোন সুবিধা ও অনিয়মের সাথে আতাত না করে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন করে দেশে প্রথমবারের মত পুলিশ নিয়োগে নজির বিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অনেকেই বলছেন এমন নিয়োগ দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ও সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হলে প্রকৃত মেধাবীরাই চাকুরিতে সুযোগ পাবে এবং দেশ থেকে দুর্নীতি বিতাড়িত হবে।
উল্লেখ্য, জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বিপিএম থানার ওসিদের মাধ্যমে নিয়োগের আগে থেকেই এলাকায় মাইকিং করে মাত্র ১শ টাকার বিনিময়ে যোগ্য এবং মেধাবীদের পুলিশের চাকুরি দেওয়ার ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী পুলিশ সুপার প্রায় শতাধিক শিক্ষিত যুবককে কনেস্টেবল পদে চাকুরি দিয়ে তিনি কথা রেখেছেন। এ ধরণের নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে এমন খবরও শোনা যায়। তবে এবারের নিয়োগে ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন খুলনা ৬ সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অনিয়ম ও দুর্নীতি মুক্ত পুলিশের এ নিয়োগে এমপি বাবু সর্বাত্বক সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বলে চাকুরি প্রার্থী সহ অনেকেই জানিয়েছেন। সব কিছু মিলিয়েই অনিয়ম ও দুর্নীতি মুক্ত পুলিশের এ নিয়োগ আগামী সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে থানার ওসি মোঃ এমদাদুল হক শেখ জানিয়েছেন।
ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য এলাকায় মাইকিং করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা হয়। চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী উপজেলার কমলাপুর এলাকার ময়নুদ্দীন সানা, পুরাইকাটী গ্রামের পারভেজ সরদার, বগুলারচক গ্রামের দয়াল কুমার মন্ডল ও হিরন্ময় মন্ডল এবং সোলাদানার সবুজ সরদার সহ কয়েকজন যুবক চূড়ান্ত পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। প্রার্থী পারভেজ সরদার জানান, আমি এর আগে কখনো এত স্বচ্ছ নিয়োগ দেখিনি। এ ধরণের ব্যাতিক্রমী নিয়োগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অভিভাবক আরশাদ আলী সরদার জানান, চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে পুলিশ কমপক্ষে আমার বাড়ীতে ৩ বার আসে। নানাভাবে তারা যাচাই-বাছাই করেছে। আমরা একজন পুলিশকেও একটি চা খাওয়াতে পারিনি। পুলিশের এই নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি মুক্ত হয়েছে এটি একটি বড় উদাহরণ।