করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে সীমিত আকারে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে গণপরিবহন যেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রে পরিণত না হয় এ ব্যাপারে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে বাস চালানোর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে ভিডিও বার্তায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন, করোনা সংক্রমণ রোধকল্পে সরকার মার্চের শেষ সপ্তাহে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যু সংখ্যা ও সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছালেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। জনগণের জীবনের পাশাপাশি জীবিকার গতি সচল রাখতে শেখ হাসিনার সরকার বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গণপরিবহন চালুর বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
‘আপনারা জানেন, লাখ লাখ শ্রমিক, মালিকের জীবনের সাথে পরিবহনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনা একজন মানবিক মানুষ, তার মানবিকতা ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। আমি অনুরোধ করব, আপনারা যারা পরিবহন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট তারা চলমান সংকট মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাবেন না। আপনাদের সামান্য ভুল বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।’
মালিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আজ বসে কিছু শর্ত বা নীতিমালা ঠিক করুন, কীভাবে যাত্রী সেবা দেয়া যায়, তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণপরিবহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংক্রমণের জন্য ভয়ানক হতে পারে। এখানে শ্রমিক, চালক, যাত্রী, পথচারি অনেকেই সংশ্লিষ্ট। একজন গাড়িতে উঠলে চেইন রিঅ্যাকশনে অনেককে সংক্রমিত করতে পারে। তাই ঢালাওভাবে নয়, নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সীমিত পরিসরে যাত্রী সেবা প্রদানে আপনারা প্রতিপালনীয় শর্তগুলো ঠিক করুন। শুধু ঠিক করলেই হবে না, কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। করোনার মৃত্যুর মিছিলের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দেশের মানুষ দেখতে চায় না।’
কাদের বলেন, ‘শুরুতে আমি কয়েকটি বিষয় আপনাদের নজরে আনতে চাই। তা হলো, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বাস টার্মিনালে কোনোভাবেই ভিড় করা যাবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীর গাড়ির লাইনে দাঁড়াবেন এবং টিকেট কাটবেন। স্টেশনে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাসে কোনো যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না। বাসের সব সিটে যাত্রী নেয়া যাবে না। ২৫-৩০ শতাংশ সিট খালি রাখতে হবে। পরিবারের সদস্য হলে পাশের সিটে বসানো যাবে অন্যথায় নয়। যাত্রী, চালক, সহকারী, কাউন্টারের কর্মী সবার জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। ট্রিপের শুরুতে এবং শেষে বাধ্যতামূলকভাবে গাড়ির অভ্যন্তরভাগসহ পুরো গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।’
‘যাত্রী উঠানামার সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। চালক, কন্ডাক্টদের ডিউটি একটানা দেয়া যাবে না। তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোয়ারেন্টাইন বা রেস্ট দিতে হবে। মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে পথিমধ্যে থামানো, চা বিরতি এভয়েড করতে পারলে ভালো। কারণ সংক্রমণ কোথা থেকে হবে তা কেউই জানে না। যাত্রীদের হাতব্যাগ, মালামাল জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে। ভাড়া নির্ধারণের জন্য বিআরটিএ’র একটি কমিটি রয়েছে। সে কমিটি আপনাদের সাথে আলোচনা করে যুক্তিসঙ্গত ভাড়া চূড়ান্ত করবে।’
কাদের বলেন, ‘আমি আশা করব, আপনারা এমন সিদ্ধান্ত নেবেন এবং বাস্তবায়ন করবেন যেন গণপরিবহন সংক্রমণের ঊর্বর ক্ষেত্র হতে না পারে। এমনিতেই জনগণ উদ্বিগ্ন। আপনারা জনগণের উদ্বেগকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করবেন। অতীতে দেশ-জাতির নানান সংকটে পরিবাহন খাত সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখনো আমরা একটি পরীক্ষার মুখোমুখি। জননেত্রী শেখ হাসিনা গণপরিবহন সীমিত পর্যায়ে পরিচালনার যে সাহসী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা আপনাদের ওপর দৃঢ় আস্থার বহিঃপ্রকাশ। আপনারা তার আস্থার প্রতি সন্মান রাখবেন। টার্মিনালে চালক, সহকারী ও শ্রমিকদের কাউন্সিলিং করুন, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন গাড়ি চালুর আগে।’
পুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ ও মন্ত্রণালয় আপনাদের সহযোগিতা দেবে। পাশাপাশি নিয়ম অমান্য করলেও শাস্তির বিধান থাকবে জনস্বার্থে। বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট সক্রিয় থাকবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পরিশেষে বলব, গণপরিবহন একটি সেবামূলক খাত, জাতির এ সংকটকালে আপনারা জাতির সেবক হোন। পরিবহনসমূহ যাতে সংক্রমণ কেন্দ্রে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকুন। সরকার গৃহীত কার্যক্রমে সহযোগিতা করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা সফলকাম হবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবিকার কথা ভেবে যে সুযোগ দিয়েছেন আশা করি আপনারা তার সদ্ব্যবহার করবেন।’