টার্গেট করে নানা ছুতায় গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করার ঘটনা ঘটে ছিল। সেই অরাজকতা ও নৈরাজ্য ঠেকাতে কঠোর অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতা সপ্তাহ ঘোষণা করে সাফল্য পেয়েছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।
এবার দেশের সব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিনিয়তই ঝরে যাচ্ছে একেকটি তাজা প্রাণ। এমন অবস্থায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে পুলিশ।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা প্রতিটি এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। সময় থাকতে দায়িত্বশীলরা এডিস মশা মারতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলেও ঘরে ঘরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে ঠিকই সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ। আইজিপি নিজ বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে দেশজুড়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানে জোর দিয়েছেন।
পুলিশ প্রধানের এমন নির্দেশনার পর দেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিষয়ে জাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের নতুন এ সামাজিক আন্দোলনের ফলে ডেঙ্গু নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কও কমতে শুরু করেছে। মশার স্থান পরিস্কার ও নিজের বসতঘর পরিচ্ছন্ন রাখলেই ডেঙ্গু ঝুঁকি থেকে রক্ষা সম্ভব এমন মানসিকতাও তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, ১০ দিন আগে পুলিশ সদর দফতরে বাহিনীর সকল ইউনিটের প্রধান ছাড়াও দেশের সব জেলার পুলিশ সুপারদের নিয়ে নানা বিষয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ডেঙ্গু আতঙ্কের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব পায়। এক্ষেত্রে পুলিশের করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনায় পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নির্দেশে মাঠে গুজব ঠেকাতে পুলিশ ‘টিম ওয়ার্ক’ নিয়ে কাজ করে সফলতা পাওয়ার পর ডেঙ্গু নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতাসহ নানা কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
পুলিশের আইজি ডেঙ্গু প্রতিরোধেও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের সব মহানগর পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে জরুরি ভিডিও কনফারেন্স করেন। মূলত তাঁর নির্দেশের পর পরই প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়ে পুলিশের প্রতিটি ইউনিট।
বাসাবাড়িসহ সম্ভাব্য সব স্থান পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে সকলের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে জেঁকে বসা আতঙ্কের মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ সদস্যরা।
সেদিন ভিডিও কনফারেন্সে আইজিপি বলেন, এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে পুলিশ কম্পাউন্ড ও আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
‘আমরা সবাই সচেতন হলে নিজের আবাসস্থল ও চারপাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে ডেঙ্গু মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না। সবাই মিলে একযোগে কাজ করলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধেও সফল হবো’ যোগ করেন পুলিশ প্রধান।
সপ্তাহখানেক আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করে ডেঙ্গুর প্রকোপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
পুলিশ প্রধানের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ঢাকা শহরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের গতি আরো বেড়েছে। যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য।
ডিএমপির সকল স্থাপনা, তার আশপাশ, পুলিশ লাইন্স, ব্যারাক, অফিস, থানা, ফাঁড়ি, কন্ট্রোল রুম, তদন্ত কেন্দ্র, পুলিশের শপিং মল, মেস ও ডাইনিং এবং আবাসিক ভবনের পরিত্যক্ত আঙ্গিনা, ফুলের টব, ড্রেন, জমে থাকা স্বচ্ছ পানির স্থান, ডাবের খোসা ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ডেঙ্গু নামক মাথাব্যাথা কমাতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রজননের সম্ভাব্য সকল স্থান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি এটি প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন দেশের প্রতিটি জেলার এসপিরা। এক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য বা গাফিলতি না দেখিয়ে শতভাগ আন্তরিকতার সঙ্গেই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকা পর্যন্ত এ সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিটি জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
‘নিজে কাজ করি, নির্ভরশীলতা পরিহার করি’ এ শ্লোগান নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহাবুবুর রহমান সপ্তাহখানেক আগেই এ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজেদের বাসা অথবা অফিসের আঙিনা-পরিষ্কার রাখতে হবে। পুলিশ প্রধানের নির্দেশে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
বগুড়ায় এডিস মশা নিধনে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আশরাফ ভূঁইয়া। একসঙ্গে ৪৫ টি ফগার মেশিন চালিয়ে শুক্রবার (০৯ আগস্ট) তিনি ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু রোধে করণীয় এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যাপারে পরামর্শমূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
পুলিশের হেল্পডেস্ক নাম্বারে ফোন করলেই সেবা মিলবে এমনটি জানিয়ে এ এসপি প্রতিবেদক কে বলেন, একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর জরুরি সেবা টিমের নেতৃত্ব দিবেন। ওই মোবাইলে কল দিলেই দ্রুত সেই এলাকায় টিম পৌঁছে যাবে। এরপর সেখানে ওষুধ ছিটিয়ে এডিস মশা কিংবা তার লার্ভা নির্মূল করা হবে। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি পুলিশের হেল্পডেক্সে কল করলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোন সহযোগিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
প্রাথমিকভাবে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড.খন্দকার মহিদ উদ্দিন বিপিএম (বার) এর দিক নির্দেশনা মোতাবেক খুলনা রেঞ্জের ১০ টি জেলায় সকল জেলার পুলিশ সুপার গণ একযোগে পুলিশ লাইন্স,জেলার প্রতিটি থানার কম্পাউন্ডে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিশ মশা নিধনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান শুরু করেছে। পুলিশের এই অভিযানে আনুমানিক ৪৫টি মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যেই এডিসের বংশ ধ্বংস করতে আড়াই মণ মশার তরল কীটনাশক আনা হয়েছে। ১৫টি স্প্রে মেশিন দিয়ে ড্রেনগুলোতে এবং ৩০টি ফগার মেশিন দিয়ে এলাকায় কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে।
নড়াইলে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। ডেঙ্গু দমনে সবাইকে সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
যশোরের পুলিশ সুপার জনাব মঈনুল হক জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে মানুষকে সচেতন করতে একটি র্যালীও করা হয়েছে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভা-সমাবেশ ও শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিদের মধ্যে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ জানান, জেলা পুলিশের উদ্যোগে খুলনার সকল থানায় বিটে ভাগ করে এডিস মশা নিধনে একযোগে কার্যক্রম চলছে। এ কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেকটি থানার আশপাশের এলাকাগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছে পুলিশ।
তিন দিন আগে সিরাজগঞ্জে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) টুটুল চক্রবর্তী। তিনি জানান, জেলা পুলিশের সকল ইউনিট প্রতিটি থানার ভেতরসহ আশপাশের এলাকাসমূহে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করছে। নিত্যদিন সকাল থেকেই এ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা স্বত:স্ফূর্তভাবে এ অভিযানে অংশ নিচ্ছে।
র্যালীর মধ্যে দিয়ে সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করে স্থানীয় পুলিশ।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজেকে সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি নিজ নিজ বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার রাখতে হবে। কোন স্বচ্ছ পানি জমতে দেওয়া যাবে না।