লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে আর মামা-খালুর টেলিফোনে জোর না থাকলে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায় না! এমন কথা লোকমুখেই বেশ প্রচলিত। তবে এবারে তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কুষ্টিয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে ৭৫ জনের চাকরি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তবে একেবারে বিনা পয়সায় ঠিক নয়, মাত্র ১০৩ টাকায়।
সারা দেশের মতো কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এবার কুষ্টিয়া থেকে নেওয়া হলো ৭৫ জনকে। মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা পূরণ করা হয়েছে। মাত্র দু’দিনেই যাচাই বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) রাতে চূড়ান্ত ঘোষণাও দেওয়া হলো।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাত তার কার্যালয়ের সামনে এই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেন।
জানা যায়, প্রাথমিকভাবে দুই সহস্রাধিক চাকরি প্রত্যাশী অংশ নিলেও লিখিত পরীক্ষায় দিয়েছেন মাত্র ৩০০ জন। এর মধ্য থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয় ৭৫ জনের নাম। স্থান পায় ৭ নারীও।
সাত নারীর মধ্যে দৌলতপুর উপজেলার শেরপুর গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান সোনিয়া আক্তার। বাবা দিদার আলীর অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। চার ভাই বোনের মধ্যে সোনিয়া সবার ছোট। অভাবের সংসারের হাল ধরার মতো কেউ নেই। বাবা দিদার আলী দরিদ্র কৃষক। তার পক্ষে বড় এ সংসার চালানো দায়। ছোট বেলা থেকেই পুলিশে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল সোনিয়ার। কিন্তু অভাবের সংসারে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার সেই সামর্থ্য নেই তার। এবার তিনি শুনেছেন চাকরিতে কোনো ঘুষ লাগবেনা। পুলিশের এমন প্রচারণায় আবেদন করেছিলেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকেও উদ্বুদ্ধ করা হয় তাকে। শরীরিক ফিটনেস কিংবা মেধা দু’টিই ছিল তার। তাই আত্মবিশ্বাসও ছিল বেশ। মাত্র ১০৩ টাকায় হয়েও গেলো চাকরি।
পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত জানান, চাকরি পাওয়া ছেলে মেয়েদের অভিব্যক্তি শুনে আমি বিমোহিত হয়েছি। যারা চাকরি পেয়েছে তাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। প্রকৃত মেধাবিরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে।
তিনি বলেন, সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই কুষ্টিয়া পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই।