নিজের ‘টার্গেট’ পরিস্কার করলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। জিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। কথায় নয় কাজেই নিজেকে প্রমাণে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। মাদক গডফাদারদের কড়া বার্তা দিয়েছেন। অঙ্গীকার করেছেন গাজীপুর মহানগরকে মাদকমুক্ত করার। সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, চুনোপুঁটি নয় গডফাদারদের ধরতে চান তিনি। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোদের তথ্য জানাতে সাধারণকে উৎসাহিত করেছেন, দিয়েছেন নির্ভয়।
অপরাধ নির্মূলে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেছেন, ‘আমি মাদক, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের গডফাদারদের ধরতে চাই। চুনোপুঁটি মারতে চাই না। গডফাদারদের ধরার পর চুনোপুঁটিদের ধরতে চাই। আপনারা গডফাদারদের সম্পর্কে তথ্য দেন। কারা মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাদের সম্পর্কে তথ্য দেন। সে যেই হোক আইনের আওতায় আনবো।’
শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানা চত্বরে কারাখানা মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে পুলিশের সমঝোতা স্মারক চুক্তির অনুষ্ঠানে মাদক নির্মূলে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। এখানে মাদকের কোনও কারবার চলবে না, আশ্বস্ত করেছেন টঙ্গী শিল্প নগরীর বাসিন্দাদের।
জিএমপি কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা এই অঞ্চলে মাদক নির্মূল করতে চাই। আপনারা জানেন কারখানার পণ্যবাহী গাড়ির চালক-হেলপার অনেক সময় মাদক গ্রহণ করেন। তারা অনেক সময় কারখানার মালামাল চুরির সঙ্গে জড়িত। তারা পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে দুর্ঘটনার হন। এজন্য টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীর যত চালক-হেলপার আছে তাদের ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নিয়েছি। ডোপ টেস্টে ধরা পড়লে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। যাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে পারে। পর্যায়ক্রমে গাজীপুর মহানগরের যতগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে তাদের চালক-হেলপার ও শ্রমিকদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মাদকের গডফাদারদের ধরতে চাই, চুনোপুঁটিদের নয়। যাদের দেশপ্রেম নেই তারাই মাদকের সঙ্গে জড়িত। তাই আমরা তাদের ধরতে চাই। আজ থেকে টঙ্গী শিল্প নগরীতে মাদকের কোনও কারবার চলবে না। মাদকের সঙ্গে পুলিশ জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য নিজেদের ঘর সামলানো হবে আগে। মাদক কারবারিরা যত শক্তিশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আপনারা মাদকের খবর পুলিশের ওসিকে, এসিকে বা ডিসিকে জানাবেন। তারা অসহযোগিতা করলে আমাকে ফোনে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এদেশের সূর্যসন্তান। তাদের মাধ্যমে এদেশের মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তারা নিজেদের উন্নয়ন ছাড়াও এদেশকে উন্নত করছে। আপনাদের হাত ধরে এদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই এদেশ উন্নত হোক, উন্নয়ন হোক। আরও শিল্প কারখানা গড়ে উঠুক। বেকার সমস্যার সমাধান হোক। বেকারদের কর্মসংস্থান হোক। যতই বেকারদের কর্মসংস্থান হবে ততই দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা কমবে। দেশে সন্ত্রাস কমবে। কারণ যে লোক সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে সে মাদক নেয় না বলে আমি বিশ্বাস করি। সে লোক চাঁদাবাজি করে না বলে বিশ্বাস করি। পুলিশ এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করবে।’
সমঝোতা স্মারকে পুলিশের পক্ষে উপ-কমিশনার মাহবুব উজ্জামান এবং শিল্প মালিকদের পক্ষে টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরী মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপিত সৈয়দ তানভীর হোসেন স্বাক্ষর করেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের স্মারক চুক্তি এটিই প্রথম বলে জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন শেখ।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন শেখের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান ও মাহবুব উজ্জামান, অনন্ত কোম্পানির এমডি ও বিজিএমইএ’র পরিচালক ইনামুল হক খান প্রমুখ।