স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আইএস নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা হয়েছে। শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলা করা হলো। ক্রমাগতভাবে হামলা হতে থাকলো। এর মধ্যেই হলি আর্টিজানে হামলা হলো। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলেছিল বাংলাদেশ শেষ হয়েছে গেছে। সেখান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
মন্ত্রী আজ (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সংকলিত 'ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ' শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এন্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত আইজি মোঃ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার), শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের গ্রান্ড ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। ধন্যবাদ জানান এটিইউ'র ডিআইজি মোঃ মনিরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। যেখানে সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। এটা বিদেশ থেকে ভাড়া করা জিনিস। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ঈমাম, শিক্ষকদের সহযোগিতায় সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, সাধারণ মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বুকে ব্যানার লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, আমরা জঙ্গিবাদ চাই না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন , জঙ্গিবাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিটিটিসি এবং পরে এন্টি টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়, তা সারা পৃথিবীতে প্রমাণ করতে সক্ষম বাংলাদেশ। যে কারণে বাংলাদেশ সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে পরিণত হয়নি। যদিও উস্কানি নিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে।
'ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ' শীর্ষক গ্রন্থটি সব ভাষাতেই অনুবাদ করার আহবান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাহলে সবাই বুঝতে পারবে ইসলাম শান্তির ধর্ম; এখানে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান নেই।
সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে এন্টি টেররিজ ইউনিট পেশাদারিত্বের সাথে জঙ্গি, চরমপন্থী দমনে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাস বা কারো ওপর আক্রমণের কোন স্থান নেই। অথচ কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার আহবান জানান।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রচুর ইসলামিক কনটেন্ট দেখা যায়। যেখানে কোনো সেন্সর নেই, কোন মডারেটর নেই, কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে অজস্র নতুন নতুন তথ্য ঢুকছে। এর কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তা বোঝা মুশকিল। এসবের বিরুদ্ধে ধর্মীয় চিন্তাবিদদের কথা বলতে হবে।
আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী চিন্তাবিদরা অজানা কারণে কথা বলতে চান না। যারা ইসলামি চিন্তাবিদ এবং যারা ওয়াজ-মাহফিল করেন তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন না।
আইজিপি বলেন, ইসলামকে অপবাদ দিয়ে বলা হয়, এই ধর্মটাই হচ্ছে জঙ্গি। সারা বিশ্বে গত ৪০ বছর ধরে এ ধরনের প্রচারণা চলছে। ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম, রক্তপাতের ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পরে আমাদের দেশের আ্যম্বাসিগুলো পরিবার ছাড়া আ্যম্বাসি ঘোষণা করা হলো। এরপর প্রতি সপ্তাহে ঘোষণা আসতে থাকলো বাংলাদেশে কারা কারা আসতে পারবে না। বিমানের মাধ্যমে তখন অনেক দেশ কার্গো বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকলের সহযোগিতায় আমরা যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা হ্যান্ডেল করতে না পারতাম তাহলে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যেত।
পুলিশ প্রধান বলেন, অনেকেই বলেছিলো জঙ্গিবাদ থেকে বাংলাদেশ কখনো বেরোতে পারবে না। আল্লাহর রহমত আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমাদের সব সময় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গিবাদের থ্রেট এখনো যায়নি। সারা বিশ্ব থেকে এ থ্রেট না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের দেশেও থ্রেট থাকবে। তিনি বলেন, পুলিশ নীরবে-সরবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে।
আইজিপি বলেন, ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। এজন্য ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরে কাউন্টার নেরেটিভ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, 'ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ' গ্রন্থের প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অতিরিক্তি আইজি মোঃ কামরুল আহসান বলেন, এন্টি টেররিজম ইউনিট একটি নবগঠিত সংস্থা। জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ বিরোধী সচেতনামূলক কাজও করে থাকে এ ইউনিট। জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসচেতনতামূলক কাজের অংশ হিসেবে কোরআন হাদিসের সঠিক তথ্য তুলে ধরে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ গ্রন্থটি সংকলন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসুদ বলেন, 'ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ' গ্রন্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি গ্রন্থটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইংরেজি ও আরবি ভাষায় অনুবাদ করে এর বহুল প্রচার করার আহবান জানান।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
উল্লেখ্য, 'ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ' গ্রন্থে ইসলামের পরিচিতি থেকে শুরু করে জিহাদসহ বহুল আলোচিত ও চর্চিত ৪৪টি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। দেশবরেণ্য ১৫ জন আলেম, গবেষক, অধ্যাপক ও খতিব বইটির সম্পাদনা পরিষদে যুক্ত ছিলেন। প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। গ্রন্থটি গ্রন্থনা, রচনা ও সংকলন করেছেন মুফতি সদরুদ্দীন মাকনুন এবং মাওলানা মিরাজ রহমান।