জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফল হয়েছে, তবে এ ব্যাপারে তৃপ্ত হওয়া যাবে না বলে মনে করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তৃপ্ত হলেই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার’ বিষয়ে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন সংস্থা বিএফডিসির অডিটোরিয়ামে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্প।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘জানতে চাওয়াটা মানুষের অধিকার। আমরাও এটা বিশ্বাস করি। তবে পাশাপাশি জানার অধিকার দেখাতে গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার যেন কেউ না করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর আমাদের ইসলামিক স্কলারদের এগিয়ে আসতে হবে। ইসলাম ধর্ম যে আধুনিক ও সব যুগের জন্যই পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান তা বোঝাতে হবে এবং ধর্মের নামে যে উগ্রবাদি চিন্তা বা মতবাদকে বন্ধে কার্যকরী দিকনির্দেশনা দিতে হবে।’
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘যত বেশি আলো, তত বেশি উত্তাপ্। আবার যত বেশি উত্তাপ তত বেশি আলো। একটি মতবাদকে মোকাবেলা করতে হলে আরেকটি মতবাদের প্রয়োজন। একটি খারাপ আইডিয়াকে ভালো আইডিয়া দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে।’
র্যাবপ্রধান বলেন, ‘সুফি সাধকদের আগমন ঘটেছে সমাজে যে অন্যায়-অবিচার অসামঞ্জস্য রয়েছে তা দূর করা, সাম্যের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমাদের দেশে প্রকৃত শান্তির কথাই প্রচার হয়েছিল। তবে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও কখনো জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ শিকড়-বাকড় ঘাড়তে পারেনি। এর পেছনে তিনটি কারণ একটি হচ্ছে সরকারের পলিসি, দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধতা ও জঙ্গিবাদ উগ্রবাদবিরোধী অবস্থান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।’
বেনজীর বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার করবো নাকি নিয়ন্ত্রণ করবো? সমাজ উন্নয়নের এমন একটা পর্যায়ে এ প্রশ্ন তুলছি যেখানে তথ্যপ্রযুক্তিতে অধিকাংশ মানুষের অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে একটি বিষয় তো স্পষ্ট করে বলা যায় যে, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। উগ্রবাদের ধারণা মোকাবেলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জটাই আমাদের নিতে হবে।’
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির যখন অবাধ প্রচলন ছিল না, তখন চারু মজুমদাররা নকশাল করেছে। তখন তো আমাদের দেশে টেলিফোনই ভালো করে কাজ করতো না। আমরা এখন প্রিন্টেট বই পড়ি না। ইন্টারনেট থেকে পড়ি। কিন্তু চারু মজুমদারের উগ্রবাদী ধারণার কারণে কীভাবে খুবই মেধাবি তরুণরা ধ্বংস হয়ে গেছে তা জানতে হবে।’ এজন্য সমরেশ মজুমদারের লেখা ‘কালবেলা’ পড়ার অনুরোধও জানান তিনি।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ইন্টারনেটে বিলিয়ন বিলিয়ন তথ্য রয়েছে। মূল ব্যাপার হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিনে আমি কী খুঁজছি। আমি কি উগ্রবাদের ম্যাটারিয়েল খুঁজছি নাকি উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। ইসলামের বিরুদ্ধে যে কথাগুলো বলে ইসলামকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে তাও আছে ইন্টারনেটে। আবার ইসলামের সঠিক কথাটাও আছে ইন্টারনেটে। আমরা আসলে কোনটা গ্রহণ করবো, কোনটা গ্রহণ করবো না আমাদের সেটা আগে ঠিক করতে হবে। বুঝে, যাচাই করে নিতে হবে সঠিকটা।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের কিছু কিছু তরুণকে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে উৎসাহিত করছে। কেবল উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা, আর্ত সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্রতা ও সুশাসনের অভাবও সহিংস উগ্রবাদের জন্য দায়ী নয়। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে হামলা। শুধু গ্রেপ্তার বা শাস্তির মাধ্যমে উগ্রবাদ প্রতিরোধ করা যাবে না। এর জন্য দরকার সচেতনতা। জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান, ধর্মীয় স্কলারদের নির্দেশনা ও লিখনি।’
ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসাকে হারিয়ে লালমাটিয়া মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।