দেশের মধ্যে প্রথম সরকারি সম্পত্তির ছবিযুক্ত ডাটাবেজ তৈরি সম্পন্ন হয়েছে খুলনায়। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সম্প্রতি নয়টি উপজেলার অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, হাটবাজার, খাস জমি এবং জলমহালের ছবিযুক্ত ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হয়। এর ফলে সরকারি স্বার্থ রক্ষা এবং ভূমি ও সায়রাত ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার (এলএসএম) মাধ্যমে ই-সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি ভূমি সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী সফটওয়্যারের উদ্বোধন করেন।
এদিকে ছবিযুক্ত ডাটাবেজ তৈরির ফলে ভূমি নিয়ে জটিলতা নিরসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে অবদান, মিথ্যা মামলা, অবৈধ দখলদার নিশ্চিহ্ন হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- শতভাগ ভূমির রাজস্ব আদায় এবং সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে এই ডিজিটাল ছবিযুক্ত ডাটাবেজ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ফলে জমির ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়াও সরকারি খাস জমি, ভিপি জমি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, জলমহাল, হাটবাজার ইত্যাদি অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের স্বল্প সংখ্যক জনবল দ্বারা এত বিশাল পরিমাণ সরকারি সম্পত্তি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, তদারকি ও রাজস্ব আদায় দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট জমিজমা ব্যক্তি পর্যায়ে রেকর্ডও হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য খুলনা সদরসহ, ফুলতলা, দিঘলিয়া, রূপসা, তেরখাদা, ডুমুরিয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, হাটবাজার, খাস জমি ও জলমহালের ছবিসহ বর্তমান অবস্থার হালনাগাদ রেকর্ড সংবলিত তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করার পদক্ষেপ গত ছয়মাস আগে নেয়া হয়। খুলনায় বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তির দাবি অনুযায়ী মোট গেজেটভুক্ত (ক-তালিকার) সম্পত্তির পরিমাণ ১০,৯৫২.৬৩ একর, পরিত্যক্ত সম্পত্তির দাবি অনুযায়ী মোট পরিত্যক্ত সম্পত্তির পরিমাণ ৩১.৫৫৮২ একর, হাট বাজারে মোট জমির পরিমাণ ১০.৫০১৭ একর, এছাড়া ২০ একরের ঊর্ধ্বের জলমহাল সংখ্যা ১৫৬টি ও ২০ একরের নিুের জলমহাল সংখ্যা ২৮৯টি। ২০২০ সালের ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেট এর ৭০৭টি ইজারা কেস নথির মাধ্যমে ৫৬৩.৯৩৫৩ একর জমি ইজারা প্রদান করা হয়েছে। খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সারোয়ার আহমেদ সালেহীন যুগান্তরকে জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা, পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে সব উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), সার্ভেয়ার, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এবং অফিস সহকারীসহ সবার আন্তরিক এবং সমন্বিত চেষ্টায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন। এতে খুলনার মানুষ উপকার পাবেন। হয়রানি কমবে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দেশের মধ্যে খুলনা জেলায় সর্বপ্রথম এমন ছবিযুক্ত ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে বলে সম্প্রতি ভূমি সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী সফটওয়্যারটি উদ্বোধন করার সময় বলেছেন। তিনি আরও বলেন, ছবিযুক্ত ডাটাবেজ তৈরির ফলে শতভাগ ভূমির রাজস্ব আদায় এবং সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলাদারমুক্ত করা সম্ভব।
সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর।