২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয় ড. বেনজীর আহমেদকে। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর থেকে শুরু হয় জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক লড়াই। অল্প সময়ের মধ্যে আলোচনায়ও আসেন তিনি। জঙ্গিদের মূলোৎপাটনে তার চৌকস নেতৃত্বের সুফল পায় দেশের মানুষ। জঙ্গিবাদ যেখানে আতঙ্কের ছিল সারা দেশের মানুষের জন্য, সেখানে বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে র্যাবের ভূমিকায় স্বস্তি ফেরে জনজীবনে।
জঙ্গিবাদকে কেবল অস্ত্রের মুখেই দমন নয়, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন সামাজিক আন্দোলনও। শিক্ষার্থীদের মাঝেও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে তৎকালীন র্যাব প্রধানের ভূমিকা ভূয়সী প্রশংসা কুড়ায়।চরমপন্থি, জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ও মাদক নিয়ন্ত্রণে র্যাবের বহু সফল অভিযানের নজির স্থাপন হয়েছে বেনজীর আহমেদের সময়ে। সন্ত্রাস দমন করে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, জাতীয়, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে র্যাব।
গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ মাঠে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী পাল্টা অভিযান। ওই সময় র্যাবের নজিরবিহীন অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জঙ্গিরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান মেলে জঙ্গি আস্তানার। একের পর এক অভিযানের ফলে মেরুদণ্ড আর সোজা করতে পারেনি জঙ্গিরা। বেনজীর আহমেদ তখন কেবল র্যাব প্রধানই নন, হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীকও।
জনগণকে সম্পৃক্ত করে সফলভাবে দেশরক্ষায় ভূমিকাও রেখেছিলেন তৎকালীন র্যাব প্রধান। জনগণের সহযোগিতার প্রশংসা করে তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীয় সংকটে দেশের জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্যের কারণেই জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব হয়েছে। সকলে মিলেই জঙ্গিদের মোকাবেলা করেছে।’
র্যাব সূত্রে জানা যায়, হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নে একটি করে জঙ্গিবাদবিরোধী সেল রয়েছে। ওই সেলের মাধ্যমে জঙ্গিদের সব কার্যক্রম নজরদারি করা হয়। এছাড়া জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য র্যাবের জঙ্গিবাদবিরোধী একটি অ্যাপও রয়েছে।
ড. বেনজীরের সময়ে র্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযান:
২০১৬ সালের ১৬ জুলাই সাভারের আশুলিয়ায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে চার জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে র্যাব।
রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। ওই অভিযানের এক পর্যায়ে আস্তানায় থাকা জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণে জঙ্গি আবদুল্লাহ ও তার সহযোগীসহ সাত জন নিহত হন।
২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। এ অভিযানে দুই জঙ্গি ঘটনাস্থলে নিহত হন।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জের সোনাপাহাড় এলাকায় একটি সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব। এ অভিযানে বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হন।
আইজিপির দায়িত্ব নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অনন্য উদ্যোগ:
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি সরকার ড. বেনজীর আহমেদকে দেশের ৩০তম পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পর তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস অটুট রয়েছে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি দেশবাসীরও। তিনি নিজেও তার প্রমাণ রাখছেন ধাপে ধাপে। পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে তার নেতৃত্বে ফের প্রশংসা কুড়ায়। বিশেষ করে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ড. বেনজীরের উদ্যোগ প্রশংসিত হয় সর্বমহলে। ‘নব দিগন্তের পথে’ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তার এই প্রচেষ্টা।
২০২১ সালের শুরুতে জঙ্গিদের নতুন জীবনে ফিরিয়ে আনতে আনুষ্ঠানিক এই আয়োজনে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ বারবার জঙ্গিবাদে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এর কোনোটাই বাংলাদেশ থেকে সৃষ্টি হয়নি। প্রতিবারই বাইরের দেশ থেকে এসেছে, প্রতিবারই শান্তিপ্রিয় মানুষের সহায়তায় তাদের পরাস্ত করেছি।’
আইজিপি বলেন, ‘এখনও যারা এ ধরনের কাজে জড়িত আছে, তাদের প্রতি আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। র্যাব, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজমসহ একাধিক টিম তাদের নজরদারিতে রেখেছে। আমাদের গোয়েন্দা কমিউনিটিও এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। হয়তো পরিপূর্ণভাবে সব ঘটনা শুরুতে বিনষ্ট করতে পারিনি। ১০০ ভাগ না হলেও অন্তত ৯০ ভাগেরও বেশি ঘটনা শুরুতেই বিনষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে র্যাব এবং তৎকালীন র্যাব মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। জানতে চাইলে মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার পিএসপি (অব.) ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ কথা নিঃসন্দেহে ঠিক যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত হাতেই জঙ্গিবাদ দমনে অনেকটাই সফল হয়েছে। বিশেষ করে র্যাবের ভূমিকার কথা বলতে হবে। তখন বাহিনীটির প্রধান ছিলেন বেনজীর আহমেদ। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র্যাব যদি অভিযান শুরু না করত, কঠোর অবস্থান না নিতো তাহলে বাংলাদেশ কোথায় যেতো, সেটা বড় প্রশ্ন। র্যাব তখন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলেই জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মডেল হিসেবে স্বীকৃত। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে। এই কৃতিত্ব যেমন র্যাব বাহিনীর রয়েছে, তেমনি সাবেক র্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদেরও রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমান পুলিশ প্রধানের চৌকস নেতৃত্বের বিষয়টি সব মহলেই প্রশংসিত হচ্ছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশের পেশাগত মান বৃদ্ধিতে বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি অপরাধ দমনেও নজির স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে জঙ্গিদের ভুল পথ থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে তার প্রশংসার দাবি রাখে।’
আগের চেয়ে পুলিশ অনেক বেশি উন্নত হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে যিনি পুলিশপ্রধান হিসেবে আছেন তিনি খুব ডায়নামিক অফিসার। সব দিক থেকেই তিনি দক্ষ। এটা তিনি তাঁর কাজে-কর্মেই প্রমাণ করেছেন। পুলিশের নেতৃত্ব ভালো আছে বলেই পুলিশ সুনাম করছে।’
জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে দেশে পুলিশের বিশেষ যেসব ইউনিট কাজ করছে, এগুলো হচ্ছে, স্পেশাল টাস্কফোর্স গ্রুপ (এসটিজি), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এবং অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট। আইজিপি বেনজীর আহমেদ সার্বক্ষণিকভাবে বিশেষ এই শাখাগুলোকে নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পেশাগত বিশেষ প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন বিশেষ শাখায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা।
যেভাবে আলোচনায় আসে জঙ্গিবাদ:
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে সিরিজ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। তখন র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয় জেএমবি ও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কয়েকশ সদস্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানি প্রমুখ।
বেনজীর আহমেদের কর্মময় জীবন:
মেধাবী, সৎ ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ড. বেনজীর আহমেদ ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা চার্লস স্ট্রার্ট ইউনিভার্সিটি ও সিঙ্গাপুরের বিশ্বব্যাংক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করেন। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
সপ্তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ছয় বছরের বেশি। তার আগে তিনি প্রায় সাড়ে চার বছর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন। বিএনপি সরকারের আমলে তার কোনো পদোন্নতি হয়নি তিনি একটি নির্দিষ্ট জেলার বাসিন্দা বলে- এমন অভিযোগ ছিল।
মিডিয়া বান্ধব আইজিপি হিসাবে ড.বেনজীর : মিডিয়াবান্ধব ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসাবে ড.বেনজীর সেই ডিএমপি কমিশনার থাকাকালীন সময় থেকে বেশ আলোচিত।সাংবাদিক দের সাথে ব্রিফ করার জন্য তিনি ডিএমপি তে অত্যাধুনিক মিডিয়া সেন্টার তৈরি করেন। সেখানে সাংবাদিক দের বসার জন্য আরামদায়ক চেয়ার ও সাাউন্ড সিস্টেম স্থাপন করেছেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ।
তাছাড়া র্যাব প্রধান হিসাবে যোগদানের কয়েক মাসের ভিতরে তিনি কাওরান বাজারে র্যাবের প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য মিডিয়া সেন্টার তৈরি করেন তৎকালীন র্যাবের নান্দনিক ডিজি ড.বেনজীর।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, পুলিশ প্রধান হয়েও তিনি সাংবাদিক দের ঠিক আগের মতই তথ্য সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ পদে থেকেও তিনি শত ব্যস্ততার ভিতরে ও সাংবাদিকদের সাথে হাসিমুখে কথা বলেন ও সময় দেন ।কোন রকম বিরক্তবোধ মনে করেন না এই কর্মবীর আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার।
পুলিশ প্রধানের সব চাইতে বড় গুণ দেশের কোন জেলায় বা বিভাগে যদি জানাতে পারেন সাংবাদিকের উপরে হামলা হয়েছে, তখন তিনি দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিট প্রধান কে নির্দেশনা দেন হামলাকারী কে গ্রেপ্তার করার এবং সেই আহত সাংবাদিকের খোজ খবর নেওয়ার জন্য।
পরিশেষে দেশের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন সামনে আসন্ন সংসদ নির্বাচন।সেই নির্বাচন কে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরাপেক্ষ করতে এবং জঙ্গীমুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে পুলিশ প্রধান ড.বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার কে আইজিপি পদে আরো ২ বৎসর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া উচিত।এটি সময়ের দাবী।বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী মানুষদের দাবী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।