আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবসর নেয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কে আসবেন এটা দলই সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে আমি কাউকে নির্ধারণ করে দিতে পারি না। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দেশের জনগণ এবং দলই ঠিক করবে কে হবেন তাদের পরবর্তী নেতা। ব্র“নেই সফর নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন -গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনীতিক দল, জনমানুষের দল। দলের একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে, সে অনুযায়ী দল পরিচালিত হয়। আগে প্রতিবছরই সম্মেলন হতো। কিন্তু এখন তা সম্ভব হয় না কারণ খরচাপাতিসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে দেশজুড়ে তৃণমূলে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সম্মেলন হবে। এরইমধ্যে আটটি টিম করে দিয়েছি- তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেও ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছি। এরইমধ্যে টিমও তৈরি করে দিয়েছি। দলের সবই ডিজিটাইলজড করে দেয়া হচ্ছে। এই কাজটি হলে সবই একজাগায় বসে এক ক্লিকেই জানা সম্ভব হবে। রাজনীতি থেকে অবসর নেয়া প্রসঙ্গে চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অবসর তো নিতেই হবে। এরপরে দলের নেতৃত্বে কে আসবে কিংবা নেতা কে হবেন-সেটা বেছে নেবে দেশের জনগণ এবং আওয়ামী লীগ। দেশের উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ক্ষমতায় এলে যে দেশের উন্নয়ন করা যায় সেটি আওয়ামী লীগ করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছি। এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নেয়। শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনমত সৃষ্টি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি এই নৃশংস হামলার নিন্দা জানিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে শোকবার্তা পাঠাই। এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনমত সৃষ্টি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করছি। এ হামলায় আমার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিম এমপি-এর নাতি আট বছরের নিষ্পাপ শিশু জায়ান চৌধুরী নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী গুরুতর আহত অবস্থায় এখনও শ্রীলঙ্কায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং শান্তি কামনা করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। গত রোববার ব্র“নেই দারুস সালাম-এর রাজধানী বন্দর সেরি বাগওয়ানের বিমানবন্দরে নামার পরপরই আমি এই মর্মান্তিক হামলার খবর পাই। তার কিছুক্ষণ পর জায়ানের মৃত্যুর খবর আসে, যোগ করেন শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসবাদ দমন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। অনেক উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এর সঙ্গে অনেক শিক্ষিত ছেলেরা জড়িত। এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমরা (বাংলাদেশ) শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আছি। এটাই যেনো বজায় থাকে। সেজন্য সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে মানুষের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো চাপ নেই বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যে জনপ্রতিনিধিরা শপথ নিয়েছে, তারা স্বেচ্ছায় শপথ নিয়েছে। সেখানে সরকারের চাপ দেওয়ার কিছু নেই। আমরা চাপ দিতে যাব কেন? গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে সংসদে না যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু গণফোরামের সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের পর বিএনপির জাহিদুর রহমান জাহিদ গত বৃহস্পতিবার এমপি হিসেবে শপথ নেন। সাংবাদিকরা গতকাল শুক্রবার সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, শপথ নিতে সরকারের তরফ থেকে কোনো চাপ আছে কি না। উত্তরে ফখরুল বলেন, নিঃসন্দেহে, সব সময়ই থাকে, যে সরকারই আসুক, এ ধরনের সরকার যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না, তাদেরকে এভাবে ভিন্ন অগণতান্ত্রিক কৌশলেই চেষ্টা করতে হয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উত্তরে তিনি বলেন, যিনি শপথ নিয়েছেন তিনিই বলেছেন, তার এলাকার মানুষ চায়। সংসদে গিয়ে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কথা বলবেন। খালেদা জিয়াকে কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বন্দি করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আদালতকে আমরা প্রভাবিত করিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল। (শপথের বিষয়ে) তাদের সিদ্ধান্ত তারাই নেবে। অন্য একটা দল সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না। দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে যে গুঞ্জন রয়েছে সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, প্যারোলের জন্য আবেদন করতে হয়। এখানে কেউ আবেদন করেনি। যেহেতু কেউ আবেদন করেনি, সেখানে আমার কমেন্ট করার কিছু নেই। ছাপা পত্রিকার সামনে প্রযুক্তি যে বাস্তবতা দাঁড় করিয়েছে সেটা সংশ্লিষ্টদের মানতেই হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেবল বাংলাদেশে নয়, প্রযুক্তি সারাবিশ্বের মানুষের জন্য নানা সুযোগ সৃষ্টি করেছে, আধুনিকতার জায়গায় নিয়ে গেছে। সেজন্য এক ধরনের ধারাবাহিকতায় চলতে থাকলে হবে না। আধুনিকতা ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে অনেক নামিদামি পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পত্রিকা কেবল অনলাইন চলে এসেছে। ছাপা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের, সোজা কথা অনলাইনে চলে এসেছে। এখন কাগজের ব্যবহার হয় না। এটা প্রযুক্তির প্রভাব। প্রযুক্তি এবং আধুনিকাতর প্রভাবে এভাবে বিবর্তন আসতে থাকবে। তাই বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সম্প্রচার শিল্প নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, এখনো অনেকে চ্যানেল চাইছে। তথ্যমন্ত্রীর (ড. হাছান মাহমুদ) সঙ্গে কথা হচ্ছিলো। বললাম যতো চাইছে, দিয়ে দিতে। কিছু না হোক, কিছু লোকেরতো চাকরি হবে, কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, আমরা সবকিছু ডিজিটালাইজড করে দিয়েছি, স্যাটেলাইটও হয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও টিভি চালানো যায়। তিন মাসের জন্য বিনা পয়সায় (টিভি চ্যানেল) চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চ্যানেলগুলো সেভাবে নিচ্ছে না। অথচ বিদেশি জায়গায় অনেক টাকা দিচ্ছে। কিভাবে আমাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অল্প খরচে টেলিভিশন চালাতে পারে সেজন্য কথা চলছে। আর ভালো অনুষ্ঠান যারা করবে, মানুষ তাদের দেখবে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষ, সুতরাং গ্রাহক কখনো কমবে না- বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওয়েজ বোর্ডের ব্যাপারে সরকারের যা করণীয়, তা সরকার করেছে, বাকিটা মালিকপক্ষের, সেখান থেকে সাংবাদিকরা যা আদায় করে নিতে পারেন, সেটা তাদের ব্যাপার। ব্র“নেই সফর শেষে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সুলতান যে আতিথেয়তা ও সম্মান দেখিয়েছেন তা খুবই বিরল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, এ সফর দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ‘টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর ব্র“নেই ছিল প্রথম সরকারি সফর’ এমন তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সফরকালে ব্র“নেই-এর সুলতান আমার এবং আমার সফরসঙ্গীদের প্রতি যে আতিথেয়তা ও সম্মান দেখিয়েছেন তা ছিল খুবই বিরল। তিনি বলেন, এ সফর দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সার্বিক বিবেচনায় এ সফর দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। গত রোববার স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটার দিকে সুলতান হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণের তিনদিনের সরকারি সফরে ব্র“নেই যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ব্র“নেই বিমানবন্দরে লাল গালিছা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে উ অভ্যর্থনা জানানো হয় শেখ হাসিনাকে। ব্র“নেই আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান দেশটির ক্রাউন প্রিন্স (যুবরাজ) আল-মুহতাদি বিল্লাহ বলকিয়া। সোমবার সকাল ১১টায় ব্র“নেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়ার সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমানে যান। সেখানে দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রথা ভেঙে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান জানিয়ে প্রাসাদের করিডোরে এসে স্বাগত জানান সুলতান হাসানাল বলকিয়া এবং ক্রাউন প্রিন্স (যুবরাজ) আল-মুহতাদি বিল্লাহ বলকিয়া। ইস্তানা নুরুল ইমান প্রাসাদের চেরাদি লায়লা কেনচানায় সুলতান বলকিয়া ও রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ব্র“নেই এর সুলতান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরকে ব্র“নেই এর সুলতান দুই দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে মন্তব্য করেন। সুলতান হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সফরে ব্র“নেই সুলতান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কৃষি, সংস্কৃতি ও শিল্প, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য, পশু সম্পদ, জ¦ালানি খাতে ৬টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ব্র“নেই-বাংলাদেশ। এ ছাড়া দুই দেশের কুটনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা ছাড়া ভ্রমণ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক নোট বিনিময় হয়েছে। সফরে ব্র“নেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। ব্র“নেই এর বিখ্যাত জামে আসর মসজিদের নামাজ আদায় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া রয়েল রেজালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি। সফরের শেষদিন সকালে ব্র“নেইয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবন ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। গত ২৩ এপ্রিল দেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমি দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময়, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, খাদ্য, কৃষি, মৎস্য, জ¦ালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিমান যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করি। ব্র“নেই-এর পক্ষে সুলতান আমার প্রস্তাবসমূহকে স্বাগত জানান এবং এগুলো বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ব্র“নেই দারুস সালাম খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখপূর্বক এসব ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করে। কৃষিক্ষেত্রে কারিগরি সহযোগিতাসহ যৌথভাবে খামার স্থাপন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষিপণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনার বিষয়ে দু’পক্ষ একমত হয়। ‘দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চালুর জন্য সমীক্ষা পরিচালনা এবং ভবিষ্যতে দ্বৈতকর অব্যাহতি চুক্তি এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ চুক্তির সম্ভাব্যতা বিবেচনার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জ¦ালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, পর্যটন অবকাঠামো, পাট শিল্প ইত্যাদি প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যখাতে প্রশিক্ষণ ও পেশাজীবীদের নিয়োগ, ওষুধ উৎপাদন ও বাণিজ্য, বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ব্র“নেই ঐকমত্য পোষণ করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বিনিময় ও সহযোগিতা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে দু’দেশের মধ্যে আর্থিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। সামরিক খাতে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা একমত হই। শেখ হাসিনা জানান, ব্র“নেই-এর সুলতান বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সুলতান শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন। আসিয়ান, ওআইসি, কমনওয়েলথ এবং জাতিসংঘসহ (অঝঊঅঘ, ঙওঈ, ঈড়সসড়হবিধষঃয, টঘ) বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে মতৈক্য হয়। তিনি বলেন, ব্র“নেই-এর সুলতান বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া ও তাদের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সুলতান রোহিঙ্গা সমস্যার ন্যায়ভিত্তিক ও স্থায়ী সমাধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আসিয়ান দেশসমূহের অধিকতর অংশগ্রহণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন নিশ্চিত করার বিষয়ে আমি সুলতানের সহযোগিতা কামনা করি। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বিনিময় বৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক ফোরাম গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রতি সুলতান সমর্থন ব্যক্ত করেন। সুলতান আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। ব্র“নেই এর সুলতানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানোর কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ব্র“নেই-এর সুলতানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছে ব্যক্ত করেন।