সাতক্ষীরার দেবহাটায় পারিবারিক গোলযোগকে পুঁজি করে পুলিশের ভয় দেখিয়ে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। টাকা ফেরত চাওয়ায় নানা রকম ভয় ভীতি ও হুমকি ধামকি অব্য রেখেছে ঐ চক্রটি। পুরিশি আতঙ্ক আর জীবনের নিরাপত্তা ঝুকিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ভ‚ক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে জিডি করার প্রস্তÍতি চলছিল। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার সহ এলাকাবাসী।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের পুষ্পকাটি গ্রামের গোলাম হোসেনের পুত্র আনোয়ার হোসেন (৩৩) একজন ভাটা সর্দার। আনোয়ার হোসেন জানায়, সে ভাটা মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে তার অধিনস্থ শ্রমিকদের দেয়। কিন্তু শ্রমিকরা ভাটার কাজ তুলে না দেয়ায় ভাটা মালিক হয় কাজ না হয় টাকা ফেরৎ চায়। কিন্তু টাকা ফেরৎ দিতে না পেরে সে এলাকা চেড়ে চলে যায়। এদিকে আনোয়ারের স্ত্রী নাছরিন (২৯) নামে বিভিন্ন সমিতি থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করা ছিল। আনোয়ার দীর্ঘদিন বাহিরে থাকায় ঋনের কিস্তি বকেয়া পড়ে। প্রায় এক বছর পর আনোয়ার বাড়িতে ফিরে এলে স্ত্রী নাছরিন সমিতির টাকা পরিশোধ করার জন্য স্বামীকে বলে। কিন্তু স্বামী আনোয়ার টাকা দিতে না পারায় স্বামী স্ত্রীর মাঝে প্রায় সময় ঝগড়া ঝাটি হতে থাকে। এক পর্যায়ে গত ২৭ আগস্ট শুক্রবার দিন নাছরিনের ভাই দেলোয়ার, ভুগ্নিপতি লিয়াকত এবং মা জাহানারা নাছরিনকে তাদের কাছে নিয়ে যায়। এর পরদিন শনিবার রাত ১০টার দিকে আনোয়ারের প্রতিবেশি সাবুর আলীর পুত্র জিয়ারুল তার (আনোয়ারের) কাছে মোবাইল করে বলে, “তুমি কোথায় ? তোমার বৌ তোমাদের নামে মামলা করেছে, সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই মানিক সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা আসছে, এক্ষুনি গা ঢাকা দাও।” এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত জিয়ারুল এবং স্থানীয় মৃত আব্দুল আজিজ এর পুত্র হক আমাদের বাড়িতে এসে আমার মা আনজুয়ারা (৫৫)কে ঘুম থেকে ডেকে উঠায় এবং তারা পুলিশকে ম্যানেজ করবে বলে আমার মা’র কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে পুলিশ তার ছেলে সহ বাড়ির সবাইকে ধরে নিয়ে যাবে বলে ভয় দেখায়। এ সময় জিয়ারুল আমাকে দেবহাটা উপজেলা ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) এর সভাপতি শেখ আহসানুল আল মামুন ওরফে বাবলু’র কাছে ফোন করার জন্য বলে। বিষয়টি বাবলু পুলিশের সাথে দফারফা করবে বলে জানায়। এ সময় আমার মা এতো টাকা কোথায় পাবে বললে টাকার অঙ্ক একটু কমিয়ে ২৫ হাজার টাকা দিতে বলে। আনোয়ার জানায়, ঐ রাতেই আমি নগদ ২৫ হাজার টাকা হক এর হাতে দেই। টাকা নিয়ে জিয়ারুল ও হক মোটরসাইকেলযোগে চলে যায়। তবে তারা কোথায় যায়, কার কাছে যায় তা জানি না। যাওয়ার সময় তারা এই টাকার কথা কাউকে না বলার জন্য বলে। কিন্তু পরদিন সকালে আমরা জানতে পারি যে আমাদের নামে কোন মামলা হয়নি। কোন পুলিশও আসেনি। তখন টাকা ফেরৎ চাইলে সেই থেকে তারা আমাদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। রাতারাতি আমাকে (আনোয়ার) এবং আমার ভগ্নিপতি লাভলুকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
অনোয়ার আরও জানায় যে, আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার গোলযোগ মিমাংসা করে দেবে বলে গত শুক্রবার আমাদেরকে পুষ্পকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেকে পাঠিয়ে আমার শ্যালক দেলোয়ার এবং ভায়রা লিয়াকাতকে মারধর করে। তিনি বলেন এই মারপিট, ভয় ভীতি দেখানোর ফলে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে আনোয়ারের মা আনজুয়ারা পুত্রের কথা সমর্থন করে বলেন, বাবলু আমার ছেলের কাছে মোবাইল করে আমাকে চায়। আমি মোবাইল ধরলে সে আমার কাছে টাকা চায়। তারা আমার ছেলের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ বিষয়ে আনোয়ারের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শামীমা জানায়, টাকা নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে রবিবার সকালে বাবলু ও জিয়ারুল আমাদের বাড়িতে এসে এক হাজার টাকা ফেরৎ দিতে যায়। কিন্তু আমরা মাত্র এক হাজার টাকা কেনো নেব, বসব টাকা ফেরৎ দেন বললে, তারা আবারও থানা পুলিশ, ডিবি’র ভয় দেখিয়ে রাতের মধ্যেই আমাদের ধরিয়ে দেবে, দেখে নেবে বলে চলে যায়। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জিয়ারুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে শেখ আহসানুল আল মামুন ওরফে বাবলু’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই মানিক মোবাইলে জানান, আমি এমন একটি বিষয় জানতে পেরেছি।দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এর পুত্র মিজানুর রহমান ফোন করে আমাকে জানায়, দেবহাটায় এ ঘটনায় আপনার নাম এসেছে, আপনি কিছু জানেন কি না। তখন আমি বলি আমি কিছুই জানি না,আমি সদর থানায় চাকরি করি, দেবহাটা থানায় কেন যাব ? বিষয়টি আমি আমার ওসি স্যারকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, যতোটুকু জানতে পেরেছি, বাবলু দালাল নামের এক ব্যক্তি আমার নাম ব্যবহার করে উক্ত টাকা নিয়েছে। এ ব্যাপারে দেবহাটা থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ বিষয়ে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা জানান, এবিষয়ে ভুক্তভোগীরা একটি চাঁদাবাজি র মামলা দায়ের করেছে।
সুত্র: দৈনিক সাতনদী।