চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন এর যৌথ আয়োজনে আলমডাঙ্গা থানাধীন প্রাগপুর বাজারে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্যে বলেন “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।” মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । মানুষের মধ্যে রয়েছে বুদ্ধি, বিচার বোধ, বিবেক, মানবিকতা। তবুও কখনও কখনও মানুষ তার মনুষ্যত্ববোধ একবারেই ভুলে যায়। প্রকৃতির সৃষ্টি তত্ত্বে মানুষ মানুষে কোনো পার্থক্য বা ভেদাভেদ নেই। কিন্তু মানুষ নিজেই তার জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের বিভেদ সৃষ্টি করছে । মানুষ ঐক্যের আদর্শ ভুলে লোভ, হিংসা, পরমত অসহিষ্ণুতা,মৌলবাদী সংকীর্ণ স্বার্থ চিন্তার কারণে সংঘর্ষ আর রক্তক্ষয়ী হানাহানিতে মেতে উঠেছে যার ফলে অকালে ঝরে পড়ছে হাজার হাজার প্রাণ,ঐক্য ও সংহতির উপর পড়ছে চরম আঘাত।ধর্ম,বর্ন,সম্প্রদায় ভিত্তিক ভেদাভেদ ও সংঘাত ই হল সাম্প্রদায়িকতা। জাতীয় সংহতি বিপন্নের অন্যতম কারণ সাম্প্রদায়িকতা থেকে মানুষকে সুপথে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
তিনি আরোও বলেন, প্রত্যেক ধর্ম বা সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ যে যার ধর্মকে সবার সেরা বলে মনে করে। কিছু এমন মানুষও থাকে যারা অন্য ধর্ম বা সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের ছোটো করে দেখে। এখান থেকে জন্ম নেয় হিংসার। নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ আসনে বসাতে গিয়ে অন্য ধর্মের মানুষের সাথে খারাপ ব্যাবহার,অত্যাচার যে সংঘাতের সৃষ্টি করে তাকে এক কথায় বলে সাম্প্রদায়িকতা। আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলতে বোঝায় এমন এক সহবস্থান যেখানে সব ধর্মের মানুষ মিলে মিশে থাকে,যেখানে ধর্ম নিয়ে কোনো হিংসার যুদ্ধ চলেনা,কোনো ধর্মের মানুষ কোনো ধর্মকে ছোটো করে দেখেনা। যেখানে সব ধর্মের মানুষ সবাই সবার বন্ধু। পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষায় পারে এমন শুভ বোধের জাগরণ করতে। সাম্প্রয়িকতার কোনো ভালো দিক নেই,যা রয়েছে সবই খারাপ দিক। দেশের উন্নতির পথে এক বিরাট বাঁধা হল সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতা সাধারণ মানুষের জীবনের সুখ শান্তিকে নষ্ট করে। পৃথিবীর কোনো ধর্মই অন্ধবিশ্বাস,ভেদাভেদ কে সমর্থন করেনা। তবুও মানুষ নিজের স্বার্থ রক্ষায় হিংসায় ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যা সমাজের শুধু ক্ষতিই করে। দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের পথ থেকে উন্নতির পথে পরিচালিত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একান্ত প্রয়োজন। দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে তারা পরস্পরের মধ্যে ঐক্য,সম্প্রীতি বজায় না রাখলে দেশ কখনই শক্তিশালী হয়ে উঠবেনা।
এসপি জাহিদ আরো বলেন, সবাই এক দেশ মায়ের সন্তান। তাই আমরা যে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ হই না কেন আমরা সকলে একই ভ্রাতৃ সম্পর্কে আবদ্ধ। আমাদের সব ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানে অবাধ অংশ গ্রহণের দ্বার মুক্ত থাকলে মিলনের পথ প্রশস্ত হবে।তখন পারস্পরিক যোগসূত্র ও সহযোগিতা ,পরমত গ্রহণের উদারতা, পরের ধর্মকে মর্যাদা দেওয়ার মানসিকতা,বিভিন্ন ধর্ম ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির অবসান ঘটাবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে রয়েছে তাই বহুসম্প্রদায়ের মানুষ থাকা সত্বেও আমরা শক্তিশালী শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে সক্ষম হয়েছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য চুয়াডাঙ্গা আপামর জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মোঃ নজরুল ইসলাম সরকার সহকারি পুলিশ সুপার দামুড়হুদা সার্কেল মোঃ মুন্না বিশ্বাস জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম অফিসার ইনচার্জ আলমডাঙ্গা থানা সহ চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের বিভিন্ন স্তরের অফিসার-ফোর্সগণ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, সকল ধর্মালম্বী আপামর জনসাধারণ।