র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, রাজধানীতে নাশকতা ঘটতে পারে– র্যাবের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল। কিন্তু কোথায় নাশকতা ঘটবে, তা নিশ্চিত করে জানা ছিল না।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে নির্বাচন উপলক্ষে র্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শুক্রবার ট্রেনে বড় নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। আজ বিএনপির হরতাল চলছে, এমন পরিস্থিতিতে ভোটাররা কি নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাবে– এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘নাশকতার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, কিন্তু কোথায় নাশকতা ঘটবে, তা নিশ্চিত করে জানা ছিল না। ইতোমধ্যে আমরা তিন জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ পেট্রোল বোমা ও ককটেল পাওয়া গেছে। কোনও ঘটনা ঘটলে আমরা জড়িতদের ধরতে কাজ করি। তবে এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করতে পারবো না। এখনও আমরা তদন্ত করছি। তথ্য পেলে জানাবো। সাধারণ মানুষের ভীতির বিষয়টা নিয়ে এমন কোনও হুমকি বা আশঙ্কা তৈরি হয়নি। র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে কাজ করছে। মানুষ নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারবে।’
নাশকতার তথ্য থাকার পরও ট্রেনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে গোয়েন্দাদের কোনও দুর্বলতা আছে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ‘২০১৪ সালে যে নাশকতা হয়েছে, সেই হিসেবে এ বছর ৩০ ভাগ নাশকতা নেই। তথ্য ছিল কিন্তু কোথায় নাশকতা হবে, এটা চিহ্নিত করা কঠিন। তবে আমাদের নজরদারি ছিল। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে র্যাব, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা– সবার সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা সারা দেশে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করেছি। আগামীকাল র্যাবের ৭০০ টহল দল কাজ করবে।
অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমি কিছু ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখেছি, সবকিছুই প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ভোট মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। প্রতি পাঁচ বছরে মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল মানুষ যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ডগ স্কয়াড, বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং বিশেষ প্রয়োজনে র্যাবের হেলিকপ্টার থাকবে। এর বাইরে আমাদের একটি নতুন ডিভাইস আছে, যার নাম ওআইভিএস। এই ডিভাইস দিয়ে এলাকার বাইরে বহিরাগতরা আসলে শনাক্ত করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। তাতে একটা বিষয় নিশ্চিত হয়েছি, আমাদের দারুণ একটি সমন্বয় রয়েছে। সবাই একসঙ্গে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা হবে।’
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘কিছু দল নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের আগে যেমন নাশকতা আমরা দেখেছি, তার তুলনায় আমাদের দেশে কিছুই হয়নি। গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের তুলনায় দেশের পরিস্থিতি অনেক ভালো।’
গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে র্যাবপ্রধান বলেন, ‘সাংবাদিকরা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে নাগরিক হিসেবে, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের সহযোগিতা করবেন। পাশাপাশি আপনাদের মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা নির্বাচন ঘিরে তিনটি স্তরে কাজ করেছি। প্রথমে নির্বাচনের আগে, যেটা আজ থেকে শেষ। আগামীকাল ভোট দিতে আসবেন তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, ভোটকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। এছাড়া ভোটপরবর্তী সময়ে পরাজিত প্রার্থীরা অনেক সময় ঝামেলা করেন, সংঘর্ষ হয়। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।’
ওআইভিএস ব্যবহারের কারণে এক এলাকার মানুষের অন্য এলাকায় যেতে কোনও বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে র্যাবপ্রধান বলেন, ‘এটা শুধু কেন্দ্রের সামনে ব্যবহার করা হবে, যাতে এক এলাকার ভোটা আরেক কেন্দ্রে আসতে না পারে। নাশকতাকারীরা যেন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য এই ডিভাইস ব্যবহার করা হবে।’