দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত "নেতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদনে আটকে যাচ্ছেন মেধাবীরা" শীর্ষক প্রতিবেদন সম্পর্কে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রতিবাদ
গত ০৪ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। সংবাদের শিরোনাম ছিল “নেতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদনে আটকে যাচ্ছেন মেধাবীরা”। প্রতিবেদনে উল্লেখিত কয়েকটি বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট ও সুষ্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামটিই বিভ্রান্তিকর। এখানে দাবি করা হয়েছে, নেতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদন মেধাবীদের চাকরি আটকে দিচ্ছে। তাহলে কি চাকরি পাচ্ছেন মেধাহীনরা? প্রকৃতপক্ষে, লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিযোগীতায় মেধাবীরাই চাকরি পাচ্ছেন। যতজন চাকরি বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে তাদের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। এদের প্রত্যেকেরই গোয়েন্দা ভেরিফিকেশন হয়েছে। চাকরি না পাওয়ার জন্য ভেরিফিকেশনকে দায়ী করলে, বিপুল সংখ্যক মেধাবী পরীক্ষার্থীর চাকরি পাওয়ার জন্যও ভেরিফিকেশনকেই কৃতিত্ব দিতে হয়।
যিনি এ রিপোর্টটি করেছেন, তিনি হয়তো জানেন না, বিসিএস এর মতো চাকরিতে প্রার্থীদের ভেরিফিকেশন পুলিশ একা নয়, আরো কয়েকটি সংস্থা করে থাকে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যে বা যারা কাজ করেন, রাষ্ট্রের স্বার্থেই তাদের ভেরিফিকেশন করা হয়। এটি একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সরকারি কাজের পরিধির মধ্যে কর্তব্যের অংশ হিসেবেই এই ভেরিফিকেশন করে থাকে পুলিশ। যেহেতু একাধিক সংস্থা এই কাজটি করে থাকেন, তাই শুধু পুলিশকে পৃথকভাবে নির্দেশ করা অনভিপ্রেত এবং তা প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্যকেও ব্যাহত করে।
বিসিএস এর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রাণালয় কর্তৃক নির্ধারিত ভেরিফিকেশন ফরম (ভি-রোল) এর প্রথম ভাগে ১৫ (পনের) টি বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে। এটি পূরণ করেন পরীক্ষার্থী নিজেই। পুলিশ কেবলমাত্র প্রার্থী কর্তৃক পুরণকৃত তথ্যসমূহ যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সত্যাসত্য নির্ধারন করেন। এক্ষেত্রে, যাচাই বাছাই ব্যতিরেকে কোনো প্রার্থী প্রদত্ত সকল তথ্যকে ঢালাওভাবে সঠিক বলে উল্লেখ করার কোনো নিয়ম বা সুযোগ নেই।
চাকরির ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনটি পুলিশ প্রতিবেদন নয়। এটিকে বলা হয় গোয়েন্দা প্রতিবেদন। থানায় মামলা বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশ যে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় সেটি হলো পুলিশ প্রতিবেদন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি চাকরি প্রার্থীদের ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়ে থাকে।
পরিশেষে, সকল কর্তব্যের ভার একচেটিয়া পুলিশের উপর চাপানোর প্রবণতা একটি অসুস্থতা। এটি প্রকারান্তরে আমাদের সংকীর্ণতা ও অজ্ঞানতাকেই প্রকাশ করে। প্রচারিত এই সংবাদে প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত পুলিশ বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে যা সম্পূর্ণরূপে তার অজ্ঞতা প্রসূত। এক্ষেত্রে পুলিশকে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে খলনায়ক বানানোর অপচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহনযোগ্য। ভবিষ্যতে এ ধরনের অবাঞ্চিত পুলিশ বিদ্বেষী সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি সচেতনভাবে পরিহারের অনুরোধ করা হলো।