“পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে"- বাস্তবতা বিবর্জিত এই গুজব প্রতিরোধে ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এক বর্ণিল র্যালি শেষে বরগুনা জেলা পুলিশ লাইনসে এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে রেঞ্জ ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ, বরিশাল রেঞ্জ, বরিশাল মহোদয়ের যোগদান।
আজ ২৮ জুলাই, ২০১৯ খ্রিঃ বেলা ১১ ঘটিকায় অতি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সুপরিকল্পিতভাবে ছড়ানো গুজব প্রতিরোধে বরগুনা জেলার জেলা পুলিশ কতৃক আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী গণসচেতনতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পুলিশ অফিস থেকে জেলা পুলিশ লাইনস পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি জনাব মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম ।
র্যালি শেষে জেলা পুলিশ লাইনসে গুজব, গণপিটুনি, মাদক, সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ বিরোধী এক সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় নতুন করে আত্মসমর্পণ করা ০৭ (সাত) জন সহ মোট ৬৫ (পয়ষট্টি) জন মাদকসেবী/ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করে। তাদেরকে সেলাই মেশিন দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
মাদকসেবী/ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, বর্তমান সময়ে আলোচিত একটি গুজব হচ্ছে- পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে। এটি নিতান্তই একটি গুজব। এই গুজবে কান দিয়ে আমরা নিজেরা বিভ্রান্ত হবো না; আর এই রকমের গুজব ছড়িয়ে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে, শেয়ার/লাইক করে অন্যকে বিভ্রান্ত করবো না। গুজব সৃষ্টি ও প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, সেতু করতে মানুষের মাথা কিংবা রক্ত লাগে না। যা লাগে তা হচ্ছে মেধা, শ্রম, রড, সিমেন্ট, বালি, আর প্রযুক্তির স্পর্শ। একটি কুচক্রী মহল এই গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, মিথ্যা রটাচ্ছে।
তিনি এ ব্যাপারে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন থাকার অনুরোধ করেন। এ ধরণের নিছক ভিত্তিহীন গুজবে কান দিয়ে তারা যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন, গণপিটুনির নামে নিরীহ মানুষকে হত্যার মতো জঘন্য ফৌজদারি অপরাধ না করেন ইত্যাদি।
এরপর মাদককে বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান প্রতিরোধক উল্লেখ করে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে যুব সমাজকে এই হায়েনার করালগ্রাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে বিশেষভাবে আহবান করেন। তিনি বলেন, মাদককে শুধু না বললেই চলবে না। এই "না" এর মধ্য থাকবে মাদক উৎপাদন, মজুদ, পাচার, বহন, বিক্রি, ব্যবসা, সেবনসহ মাদকের প্রকৃষ্ট মূলোৎপাটন।
মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের একটি চলমান কার্যক্রম। বরগুনা জেলায় নতুন করে আজ ০৭ জন মাদকসেবী/ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ সহ এই নিয়ে মোট ১৫৭ জন মাদকসেবী/ব্যবসায়ী আলোর পথে ফিরে এলো। এই সংখ্যাটি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
উল্লেখ্য, ডিআইজি মহোদয়ের আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে বরিশাল রেঞ্জে এ পর্যন্ত মোট ১০০০ (এক হাজার) জন মাদক ব্যবসায়ী/সেবী অন্ধকার পথ থেকে আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে ফিরে এসেছে, ২৭৮ জন মাদকসেবী/ব্যবসায়ী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছে এবং ৩১৬ জনকে স্বাভাবিক জীবনোপকরণ দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
পরিশেষে, সকল মিথ্যাচার, অপপ্রচার আর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্ক করে প্রধান অতিথি বলেন, সদা জাগ্রত বাংলাদেশ পুলিশ কোনো অপরাধীকে, অন্যায়কারীকে ছাড় দিবে না।
পদ্মাসেতু নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে ফৌজদারি আইনে বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি সাধারণ মানুষকে গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জোরালো আহবান জানান।
বরগুনা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মারুফ হোসেন পিপিএম এর সভাপতিত্বে উক্ত সুধী সমাবেশে আরো যোগদান করেন বরগুনা জেলার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বিভিন্ন উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষকমন্ডলী, সমাজসেবক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সাংবাদিকবৃন্দসহ জেলার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বরগুনার জেলার আজকের র্যালি ও সুধী সমাবেশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।