একটি সাংবিধানিক ও স্বাধীন সংস্থা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের গুরুদায়িত্ব তাদের। সর্বোচ্চ নিষ্ঠা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করে সুনাম কুড়িয়েছে এ কমিশন। সম্প্রতি এ কমিশনে গুরুত্বপূর্ণ সচিব পদে এসেছেন নতুন মুখ।
দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবন শেষে বিদায় নিয়েছেন কমিশনের সচিব ও.এন.সিদ্দিকা খানম। তাকে বিদায় জানাতে চিরায়ত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পরিবর্তে ‘বিদায় অভিনন্দন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কমিশন। কান্না, কষ্ট বা হাহাকারের পরিবর্তে প্রথা বিরোধী এ অনুষ্ঠানটি আনন্দমুখর করে তোলা হয়েছে।
ফুলেল শুভেচ্ছায় যেমন বরণ করা হয়েছে নতুন সচিব মো.মোস্তাফিজুর রহমানকে তেমনি বেদনাভারে কাতর না হয়ে হাসিমুখেই ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত করে ‘শুভ বিদায়’ জানানো হয়েছে ও.এন.সিদ্দিকা খানমকে।
চোখের পানিতে ভিজে কর্দমাক্ত না করে বিদায় ক্ষণটিতে ও.এন.সিদ্দিকা নিয়ে গেছেন একরাশ সুখস্মৃতি। আর চিরায়ত নিয়মের বিচ্ছেদের (বিদায়) বিপরীতে প্রিয় মুখগুলোর অফুরান ভালোবাসায় নবতর যাত্রা করেছেন অবসর জীবনে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যায় এমন সব ঘটনা প্রবাহের উজ্জ্বল স্বাক্ষী হয়ে উঠেছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) হলরুম। আক্ষরিক অর্থেই এ বিদায় সম্ভাষণ হয়ে উঠেছে আড়ম্বর আর আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ।
আর এসবের নেপথ্যে রয়েছেন পিএসসি চেয়ারম্যান ড.মোহাম্মদ সাদিক ও বিজ্ঞ সদস্য থেকে শুরু করে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দায়িত্বগ্রহণ করেই বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি দক্ষ, সৎ ও নিবেদিত প্রাণ কর্মী বাহিনী বাছাইয়ের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্বাধীন এ সংস্থাকে ঘিরে যেন আনন্দময় স্বপ্নের ছবি এঁকেছেন পিএসসি’র নতুন সচিব মো.মোস্তাফিজুর রহমান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে সফল দায়িত্ব পালন শেষে নতুন স্বপ্ন নিয়েই নতুন এ দায়িত্বে এসেছেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য গোপালগঞ্জের এ কৃতি সন্তান।
সবাইকে নতুন সচিব শুনিয়েছেন দক্ষতা, ক্ষিপ্রতা ও শৃঙ্খলার অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে দায়িত্ব পালনের মন্ত্র।
পিএসসির মর্যাদা কীভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে বহুলাংশে এমন বক্তব্য যেমন উপস্থাপন করেছেন তেমনি রেখেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা।
অনুষ্ঠানের আলোচক পিএসসি’র বিজ্ঞ সদস্য, নতুন সচিব এবং বিদায়ী সচিবদের পরে অনুষ্ঠান মঞ্চে ডায়াসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান পিএসসি চেয়ারম্যান ড.মোহাম্মদ সাদিক।
সিভিল সার্ভিসে বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এ মানুষটি শিক্ষা সচিব ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে ২০১৬ সালের ২ মে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন।
শুরুতেই সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদায়ী অনুষ্ঠান মানেই বেদনাবিধুর হতে পারে না। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কর্মীরা এই ধারণাকে আমুল বদলে দিয়েছেন।’
পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের বিদায়ী সচিব বিদেশে ছিলেন। আর নবাগত সচিব যিনি আগে দুদকে ছিলেন তিনি এখানে এসেছেন। তাই আমি ভাবলাম দু’জন একসাথে একদিনে আসলে বাড়তি ভালবাসার সঞ্চারিত হয়।’
প্রশ্নফাঁস রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ঘুরে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস ছাড়াই পিএসসি ৪০ হাজার পর্যন্ত প্রশ্ন মুদ্রণ করে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। একসময় গণমাধ্যমে গালাগালি, নিন্দাবাজি ছিল আমাদের জন্য প্রাপ্য।
এখন প্রথিতযশা সংবাদমাধ্যমেও পিএসসি’র উচ্ছসিত প্রশংসা করা হয়। এমনকি প্রার্থীরা যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাঁরাও কিন্তু বলে না যে, পিএসসি আমার প্রতি অবিচার করেছে। এটা নি:সন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের’ যোগ করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের এ প্রতিষ্ঠাতা।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি উল্লেখ করে পিএসসি চেয়ারম্যান ড.সাদিক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলছে; মুক্তিযুদ্ধ চলবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আজকেও (বৃহস্পতিবার) একটি রায় হয়েছে।’
নতুন সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে সব রকমের সহযোগিতার অঙ্গীকার করে ড.মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘আমাদের নতুন সচিব গোপালগঞ্জের সন্তান। এ গোপালগঞ্জের গর্ব ও অহংকার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন।
ইতিহাসের এ মহানায়ক না থাকলে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পারতাম না। এমনকি জাতির পিতার উত্তরাধিকার বঙ্গকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সরকারের দায়িত্বে না থাকলে অনেক যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে পেনশন না নিয়েই বাড়িতে চলে যেতে হতো।’