দু’পায়ে লাল রঙের জুতো। লিপিস্টিক দিয়ে ঠোঁট রাঙানো। ঝুঁটি করা চুল। গলায় মালা। আশার আলো আর প্রশান্তিতে ভরা দু’চোখ জ্বল জ্বল করছে। আট বছরের শিশু জান্নাতকে তার মা এভাবেই সাজিয়েছেন। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। তার আজ বড় আনন্দের দিন, মহাখুশির দিন। তার ডান পায়ে সংযোজন করা হয়েছে কৃত্রিম পা। নিজের পায়ে ভর করে সে এখন দাঁড়াতে পারছে, হাঁটতে পারছে। এখন তাকে আর ক্র্যাচে ভর করে চলতে হবে না, মাদ্রাসায় যেতে হবে না।
সেজেগুজে নিজের পায়ে ভর দিয়ে অপেক্ষা করছে জান্নাত। অপেক্ষায় আছেন তার পিতা-মাতাও। বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা, যিনি তাকে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন, নতুন করে বাঁচার আশা জাগিয়েছেন তিনি আজ (১৩ জুন) দেখতে আসবেন তাকে। ঘড়ির কাঁটা তখন বারটা পেরিয়েছে। তিনি জান্নাতের ওয়ার্ডে প্রবেশ করছেন। দূর থেকে তাঁকে দেখেই দৌড়ে ছুটে আসে জান্নাত। তিনি পরম মমতায় জান্নাতকে জড়িয়ে ধরেন, কোলে তুলে নেন। আনন্দঘন এ মূহুর্তে তাঁর অশ্রুসজল হয়ে উঠে। তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। তখন ওয়ার্ডে উপস্থিত চিকিৎসক, নার্সসহ সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
জান্নাতের জন্য পুতুল, রং পেন্সিল ও পোশাকসহ অন্যান্য উপহার সামগ্রী নিয়ে যান পুনাক সভানেত্রী।
পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জনাব জীশান মীর্জা বলেন, শিশু জান্নাত কৃত্রিম পা হলেও নিজের পায়ে হাঁটতে চেয়েছিল, আজ তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মেয়েটি কৃত্রিম পায়ে আমার কাছে দৌড়ে এসেছে, এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
এ সময় তিনি সতর্কতার সাথে গাড়ি চালানোর জন্য চালকদের প্রতি অনুরোধ করেন।
জান্নাতের পিতা-মাতা পুনাক সভানেত্রীর এ মহানুভবতার জন্য তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।
পুনাকের স্বাস্থ্য সম্পাদিকা ডা. প্রথমা রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি রখফার সুলতানা খানম, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় গান পা হারানো জান্নাত কৃত্রিম পা হলেও নিজের পায়ে হাঁটার আকুতি জানিয়েছিল।
মিডিয়ায় প্রকাশিত জান্নাতের করুণ মিনতি নজর কাড়ে পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার। তিনি মেয়েটির খোঁজ-খবর নেন, তার চিকিৎসার বিষয়ে পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। মেয়েটিকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জিমি, সিটিজেন জার্নালিস্ট, সাতক্ষীরা।
Copyright © 2024 Update Satkhira. All rights reserved.