মাগুরায় কিশোর অপরাধীদের দ্বারা গত জুলাই মাসে ২টি খুন ও একাধিক খুনের চেষ্টাসহ বেশকিছু অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটে যাওয়ার প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নানাবিধ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। ফলে আগস্ট মাসে আনুপাতিক হারে কিশোর অপরাধ কমে এসেছে বলে শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে জেলা পুলিশের আয়োজনে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় জানানো হয়।
পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রিজওয়ান এর সভাপতিত্বে সভায় জানানো হয়, সম্প্রতি মাগুরা শহরে সন্ধ্যার পরে স্কুল কলেজে পড়া কোন কিশোরকে অপ্রয়োজনীয় কারণে ঘোরাঘুরি করতে দেখলে বা আড্ডা দিতে দেখলে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে অভিভাবকের জি¤মায় দেয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার জন্য ওই অভিভাবক ও কিশোরের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাসহ মুচলেকা নেয়া হচ্ছে। শহরের গার্লস স্কুল এবং মহিলা কলেজের সামনে স্কুল ও কলেজ চলাকালীন, শুরু ও ছুটির সময় কোন কিশোরকে অনাকাংখিতভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে অভিভাবকের জি¤মায় দেয়া হচ্ছে। কোন কিশোর বা কিশোর গ্যাং বেপরোয়া, জিগজ্যাগ বা এলোমেলোভাবে মোটরসাইকেল চালাতে দেখলে বা চালনার উদ্যোগ গ্রহণ করলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হচ্ছে।পাশাপাশি মোটরযান আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কোন কিশোরকে বখাটে স্টাইলে চুল না কাটতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া কিশোর অপরাধের নেতিবাচক প্রভাব ও কুফল এবং আইনগত বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজে পৃথক পৃথকভাবে অন্তত ২০টি মতবিনিময় সভা বা সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান- গত একমাসে সব মিলিয়ে প্রায় ১শ কিশোরকে আমরা নানা ধরনের অপরাধে আটক করেছি। এরমধ্যে অধিকাংশই অভিভাবকদের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এছাড়া গুরুতর ঘটনার সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে জুলাই মাসের ২তারিখে কিশোর আসামী মানজাল ইসলামসহ অন্য ৩ জন আসামীর সহযোগিতায় আল আমিন(১৫) নামে এক কিশোরের গলা কেটে হত্যা করে তার ইজি বাইক ছিনতাই করে নিয়ে যায়। একই মাসের ৭ তারিখে মাগুরা সদর থানাধীন শিবরামপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্বে মডার্ন মোড়ে লিসানুর রহমান লিসান (১৭) নামে এক কিশোরকে তারই বন্ধু শামীম, রবিনসহ কয়েকজনে মিলে ধারালো অস্ত্রদিয়ে হত্যা করে। ৫জুলাই সদর থানার বাগবাড়ীয়া গ্রামের দারুল কোরআন মাদ্রাসার মসজিদে গভীর রাতে কিশোর অপরাধী নাঈম মোবাইল হারানোকে কেন্দ্র করে তার সহপাঠি হাবিবুল্øা (১৫)কে ঘুমন্ত অবস্থায় গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করে।
ওই মাসেই মাগুরা সদর থানাধীন পারলা গ্রামে কিশোর আসামী ১. সুমন বিশ্বাস ২. মাসুম ৩. আল মামুন ৪. অভি বিশ্বাস মিলে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। এই ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় একটি মামলা হয়। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনার সঙ্গেই কিশোর অপরাধীরা জড়িত হয়ে পড়ায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এতে চলতি আগস্ট মাসে উল্লেখযোগ্য কোন কিশোর অপরাধের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান পুলিশ সুপার। এমনকি ঈদের সময়ও কিশোর মোটর বাইক চালকদের দৌরাত্ম অনেকটাই সহনিয় ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মাগুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামীম খান, সাংবাদিক আবু বাসার আখন্দ, রূপক আইচ, অলোক বোস, রাশেদ খান, আরাফাত হোসেন, আশিকুর রহমানসহ অন্যরা।