♣♣♣
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ বাংলাদেশ পুলিশ ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) মহোদয়ের উপস্থিতিতে বিশেষ কল্যাণ ও আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অদ্য ২৪ জুলাই ২০১৮খ্রি: ১১:৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্স সিভিক সেন্টারে বিশেষ কল্যাণ ও আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি জনাব খন্দকার গোলাম ফারুক, বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) মহোদয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জনাব মো: মাহাবুবর রহমান, পিপিএম মহোদয়।
বিশেষ কল্যাণ ও আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জনাব নুরেআলম মিনা, বিপিএম, পিপিএম। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও সম্মানিত আইজিপি মহোদয় উপস্থিত হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম জনাব নুরেআলম মিনা, বিপিএম, পিপিএম বলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে নিয়মিত সাড়াঁশী অভিযান পরিচালনা করছে এবং এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। চট্টগ্রাম জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামী দিনের যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আইন-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে জেলা পুলিশ সদা প্রস্তুত রয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম(বার) মহোদয় সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া জ্ঞাপন করে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন পদবীর উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। তিনি পুলিশ সিভিক সেন্টারের মতো একটি মনোরম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানান। বক্তব্যে পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়ী/পিকআপ/এ্যাম্বুলেন্স ও জনবল স্বল্পতা ছিল। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ পুলিশ এ সমস্যা কাটিয়ে উঠছে। গত ৯ বছরে প্রায় ৮০/৮৫ হাজার জনবল নিয়োগ হয়েছে। অনেক পদোন্নতি হয়েছে বিভিন্ন পদবীতে। কিন্তু বর্ধিত জনবল ও পদোন্নতির সমান্তরালে যানবাহনের সংখ্যা অতটা বাড়েনি। সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ হলেও সব সমস্যার এখনো সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এ সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন এবং অচিরেই এ সমস্যা দূর হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা প্রদানে সরকার আন্তরিক রয়েছে এবং এসআই পর্যন্ত ঝুঁকি ভাতা ইতোমধ্যে মঞ্জুর হয়েছে। পুলিশ পরিদর্শক হতে তদুর্ধ্ব অফিসারদের ঝুঁকি ভাতা প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পুলিশ সদস্যদের বেতন হতে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে কর্তণের প্রক্রিয়া যথাসম্ভব হ্রাস করা হয়েছে, কল্যাণ ফান্ড হতে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ যোগান দেয়া হচ্ছে, দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিহত পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্সে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে মৃতদেহ সংরক্ষণ করার জন্য মরচুয়ারী স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মেধাবী সন্তানদের উৎসাহিত করার জন্য মেধাবৃত্তি চালু করা হয়েছে। অবসরকালিন রেশন প্রদানের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। ডিউটির জন্য বিভিন্ন যানবাহন ও মোটরসাইকেল বরাদ্দ করার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সুপার নিউমারারী পদে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন করার বিষয়টি সরকারের নজরে আনা হয়েছে এবং সকল পদবী হতে পদোন্নতি প্রাপ্তির প্রক্রিয়া যুগোপযোগী ও সহজতর করা হয়েছে।
তিনি উপস্থিত অফিসার ইনচার্জদের উদ্দেশ্যে বলেন অফিসার ইনচার্জ একটি সম্মানজনক পদ। এ সম্মান বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি থানাকে সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ দেশের মানুষের ট্যাক্স হতে পুলিশের বেতন দেয়া হয় তাই প্রজাতন্ত্রের নাগরিকদের সকল ধরণের আইনগত সহায়তা প্রদানসহ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা প্রদান পুলিশের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ দায়িত্ব ও কর্তব্য হতে বিচ্যুত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষের অভাব-অনুযোগ আমলে নিয়ে তাৎক্ষনিক সাড়া দিতে হবে যাতে মানুষ পুলিশের উপর আস্থা না হারায়।
তিনি আরো বলেন বাংলাদেশ পুলিশ একটি পরিবার। তিনি এ পরিবারের অভিভাবক হিসেবে উপস্থিত সকল পুলিশ সদস্যকে একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়াতে বলেন। তিনি অফিসার ইনচার্জসহ সকল কর্মকর্তাকে নিজ নিজ এলাকার পুলিশ সদস্যদের যেকোন যৌক্তিক সমস্যা সমাধানে আইনগত সহায়তা প্রদানে আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন বাংলাদেশ পুলিশ শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কখনো আপোষ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবেনা। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের যেকোন ধরণের অনিয়ম হতে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি বাংলাদেশ পুলিশের কল্যাণে বর্তমান সরকারের অসামান্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্বরণ করেন। বিগত ৯ বছরে সরকার পুলিশের প্রভ‚ত কল্যাণ সাধন করেছে। স্বাধীনতার পর কোন সরকারের আমলে পুলিশের এতো উৎকর্ষ সাধিত হয়নি। তিনি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য পেশ করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি জনাব খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম, পিপিএম মহোদয়। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য আইজিপি মহোদয়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি সকল পুলিশ সদস্যকে আইজিপি মহোদয়ের প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করার পরামর্শ প্রদান করেন এবং থানাকে গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা হিসেবে পরিনত করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মহোদয়গণ, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মহোদয়গণ, পাবর্ত্য জেলা ব্যতীত রেঞ্জাধীন ০৭ জেলার পুলিশ সুপারগণ, ০৭ জেলার থানার অফিসার ইনচার্জগণ, আরআরএফ/নৌ পুলিশ/ট্যুরিস্ট পুলিশ/ শিল্প পুলিশ/ ট্রাফিক পুলিশ/ এপিবিএন/ পিবিআইসহ ১২টি ইউনিটের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইনচার্জবৃন্দ এবং ১২টি ইউনিটের প্রায় ২,০০০ জন অফিসার-ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।