পুরনো বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর এক দিন পিছিয়েছে বসন্ত। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কাজ করেছে বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ। তারা জানিয়েছে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে।কবি সুভাস মুখোপাধ্যায় লিখেছেন- ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/ আজ বসন্ত।’ বসন্তই যদি হবে, ফুল ফুটবে না কেন? ফুল ফোটার প্রতিশ্রুতি নিয়েই তো বসন্ত আসে। এখন অবশ্য বসন্তের আগেই ফুটে নানান ফুল। সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান হয়তো চেনেন, এ বছর মাঘের মাঝামাঝিতেই ফুলে ফুলে লাল হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রটি। আপনার আশেপাশে আম গাছ থাকলে তাকিয়ে দেখুন না- কত সুন্দর মুকুল ধরেছে।বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন। ফুল ফোটার পুলকিত সময়। শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠবে রুক্ষ প্রকৃতি। ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাস আর কোকিলের মিষ্টি কলতানে উন্মাতাল হবে প্রকৃতি। ফুলেল বসন্ত যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাস মুখরতায় মন-প্রাণ ভরিয়ে তোলে।বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কাল অমর একুশে গ্রন্থমেলার শিশুপ্রহরে গেলেই টের পাবেন উচ্ছ্বস; কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই। শাহবাগ, টিএসসি, রমনা, ধানমণ্ডিলেকের চত্বর এদিন বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পরা নারী ও বিভিন্ন রংয়ের ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে। ফাগুনের প্রথম দিনে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে পথে নামবে তন্বী-তরুণীরা। নতুন ফুলে খোঁপা সাজাবে। অসংখ্য রমণীর বাসন্তী রঙে রঙিন হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশোভিত সবুজ চত্বরসহ পুরো রাজধানী। তরুণরাও পরবে বাসন্তী রঙের পোশাক।
এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত আসুক সবার হৃদয়ে।