মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা বাঙালি জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা।
তিনি বলেন, ‘ঘাতকের বুলেট বঙ্গবন্ধুর ৫৫ বছরের মহাজীবনের পরিসমাপ্তি টানলেও সেই জীবন পেরিয়েছে শত বছরে। এরইমধ্যে বাঙালি জাতির স্থপতির শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জীশান মীর্জা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন। তিনি এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। তাঁর অঙ্গুলি হেলনে মোহিত হয়েছিল সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি।
সেদিন তার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই অমর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিপীড়িত কোটি বাঙালি। সেই মন্ত্রপূত ঘোষণায় বাঙালি হয়ে উঠেছিল লড়াকু এক বীরের জাতি।’
কিন্তু ১৫ আগস্টের কালো রাতেই অকৃতজ্ঞ, ক্ষমতালোভী বিপদগামী কিছু নরপিশাচ পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে পৈশাচিক ও নারকীয় রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে শুধু একটি পরিবারকেই নিশ্চিহ্ন করেনি বরং যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি নবীন রাষ্ট্রের এক অসাধারণ পথচলাকেও থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।
রোববার (১৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মগবাজারে পুনাক কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। পুনাকের এবারের আলোচনা সভার থিম স্লোগান ছিলো ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’।
প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বপরিবারে খুন হন তখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্বে অন্য অনেকেই উপস্থিত থাকলেও বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন পুলিশের এক অকুতোভয় সদস্য এএসআই সিদ্দিকুর রহমান। তিনি সেদিন নিজের জীবনের পরোয়া না করে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে ঘাতকদের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন।’
পুনাক সভানেত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাতে যেমন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের বীর পুলিশ সদস্যরা। বাংলাদেশেকে স্বাধীন করতে পুলিশ সদস্যরাই সর্বপ্রথম বুক পেতে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুলেটের সামনে। তিনি বলেন, পুলিশ হচ্ছে সেই সংগঠন যার সদস্যরা কখনো এ দেশের সাথে, এ দেশের ইতিহাসের সাথে বেঈমানি করেনি।
এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের এ অসামান্য আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম সাহসিকতা (মরোণোত্তর) প্রদান করেন। এ মহতি উদ্যোগের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পুনাক সভানেত্রী।
এর আগে দোয়া মাহফিল শেষে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ সকল শহিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে পুনাকের অন্যান্য নেতারাও বক্তব্য রাখেন।