এসএম শহীদুল ইসলাম: বরেণ্য চিত্রশিল্পী ঈষিকা আর্টের এম এ জলিলের স্মরণে আজ ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে। গত ১৯ জুলাই দিনগত রাতে সাতক্ষীরার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বরেণ্য চিত্রশিল্পী এম এ জলিল চলে যান না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
এম এ জলিল ছিলেন জেলার প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মী। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একান্ত আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। অসাধারণ বিনয়ী ও সদালাপী মানুষটি ছিলেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ।
গত কয়েক মাস যাবত তিনি হৃদ রোগে ও পেটের পীড়ায় ভুগছিলেন। ১৯ জুলাই বিকালে পুনরায় অসুস্থ হলে তাকে শহরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত দশটার দিকে আবারও তার অপারেশন করা হয়। পেটের অসুখের জন্য একাধিকবার সার্জারি করা হয়। তার আত্মীয়স্বজনদের অনেকে ধারণা করছেন, শিল্পী জলিলের শুরু থেকেই পেটের অসুখের চিকিৎসা কার্যকম সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দু’পুত্র ও আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্যক বন্ধু-বান্ধব ও গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীন ও সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারকে চিত্র শিল্পী এম এ জলিল তার দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী ঈষিকা’র অর্কেস্ট্রা শিরোনামে স্মারক গ্রন্থটি প্রদান করেছিলেন। এরআগে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ছবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছবি, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছবি, আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ছবি, শিল্পী এসএম সুলতানের ছবিসহ অসংখ্য ছবি এঁকে খ্যাতি অর্জন করেন। গ্রাম বাংলার মানুষের দু:খ-দুর্দাশার ছবি রং তুলির আঁচড়ে নিখুঁতভাবে অঙ্কন করে তুলে এনেছিলেন শিকড়ের ছবি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চিরবিশ্বাসী এমএ জলিল মুক্তির আকাক্সক্ষায় সেই ১৯৭১ সালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থা থেকে এঁকেছেন অপরূপা রূপসী বাংলার নানা ছবি। গাঁয়ের বধূ থেকে শুরু করে শিল্পী কবি রাজনীতিক কেউ বাদ যায়নি তাঁর তুলির রং থেকে। প্রত্যেকটি ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন হৃদয়ের অনুভূতিমাখা ব্যথা বেদনা আনন্দ হাসি কান্নার চিত্র। তাঁর আঁকা একেকটি ছবিই যেনো একেকটি পরিবারের কাহিনী। দেশের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য চিত্রকর্ম রেখে গেছেন এমএ জলিল।
জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে তার প্রতিষ্ঠিত ঈষিকা আর্টের দুয়ার খোলা রেখেছেন অবিরত। সংস্কৃতিমনা এমএ জলিল ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনের সাথে যুক্ত থেকে গণমানুষের জন্য কাজ করেছেন নিরবে। তিনি বলতেন, একটি দেশের সংস্কৃতিই যদি না থাকে, তাহলে সেদেশের থাকলো টা কী ? আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির বুকে বারবার কুঠারাঘাত করেছে বিশেষ মহল। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত বাঙালি সংস্কৃতিকে রক্ষার দায়িত্ব সকলের। বিশেষ করে আগামী প্রজন্মের সন্তানদের এ দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন তিনি।
বরেণ্য শিল্পী এমএ জলিল নাগরিক শোকসভা আজ। এ উপলক্ষে বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিটে শিল্পীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শোক প্রস্তাব গ্রহণ, বিকেল ৫টায় প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন এবং ৬টায় আলোচনা সভা। জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে এ শোকসভা। শোকসভায় সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।