বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পদে নির্বাচিত মো. সাহাবুদ্দিন। আইন পেশা, বিচারালয় ও দুদকে দায়িত্ব পালনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ নেন নতুন রাষ্ট্রপতি। তাকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শপথ নথিতে স্বাক্ষর করেন।
শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, নতুন রাষ্ট্রপতির ড. রেবেকা সুলতানা ও ছেলে আরশাদ আদনান রনি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তি, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা ও পেশাজীবী প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
নিয়ম অনুযায়ী শপথ অনুষ্ঠানের পর নতুন রাষ্ট্রপতিকে চেয়ারে বসিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। এসময় তিনি রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রপতিকে পরিচয় করিয়ে দেন।
এদিকে রাজসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বঙ্গভবন ছেড়ে যাচ্ছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। টানা দুই বার রাষ্ট্রপতি হওয়া আবদুল হামিদ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দিন দায়িত্ব পালন করা রাষ্ট্রপ্রধান।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল আবদুল হামিদ প্রথম দফায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২৩ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হলো।
বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের উত্তরসুরী মো. সাহাবুদ্দিনের রয়েছে আইন পেশা, বিচারালয় ও দুদকে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন মহলে ডাকনাম চুপ্পু হিসেবে তিনি বেশি পরিচিত।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ৭৩ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদে পরোক্ষ ভোটে। সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন। তবে মো. সাহাবুদ্দিন একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় আর ভোটাভুটির প্রয়োজন পড়েনি।
প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ না থাকায় ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেদিনই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
এক নজরে মো. সাহাবুদ্দিন
মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম চুপ্পু। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা।
সাহাবুদ্দিন ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
সাহাবুদ্দিন ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম হত্যার পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন সাহাবুদ্দিন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।
মো. সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তাঁর অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা টাইমসেও নিয়মিত কলাম লিখেছেন তিনি।
কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দুদক কমিশনার হিসেবে সাহাবুদ্দিন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে উঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণেও সমর্থ হন তিনি।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।