বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ এলিট বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব কোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত নয়। এ ধরনের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বললেন বাহিনীটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে র্যাবের মুখপাত্র কর্নেল আশিক বিল্লাহ এসব কথা বলেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন সিনেটর র্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা কমান্ডিং অফিসারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, মার্কিন সিনেটরদের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে এলিট ফোর্স র্যাব চার শতাধিক লোককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম করা এবং নির্যাতন করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘যে নিউজটির কথা বলছেন এটি বিভিন্ন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসার পর র্যাবের নজরে এসেছে। যে বিষয়বস্তু নিয়ে মার্কিন সরকার আলোচনা করেছে, এ বিষয়ে র্যাবের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হচ্ছে র্যাব কখনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৪ বছরে গণমানুষের যে আস্থা, ভালোবাসা এবং সর্বোপরি সর্বস্তরের মানুষের যে বিশ্বাস অর্জন করেছে সেটি অনন্য ও অসাধারণ।’
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘র্যাবের প্রত্যেকটি কার্যক্রম ফৌজদারি কার্যবিধি এবং দেশের প্রচলিত আইনের পাশাপাশি বাহিনীর নিজস্ব বিধি মোতাবেক পরিচালিত হয়ে থাকে। সকল অভিযানের কর্মকাণ্ড আমাদের আইনের গণ্ডির ভেতরে থেকেই পরিচালিত হয়ে থাকে।’
এই অভিযোগ ওঠার পেছনে এমন কোনো কারণ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই এলিট বাহিনীটির মুখপাত্র বলেন, ‘কোন প্রেক্ষাপটে বা কোন বাস্তবতায় এই বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের সামনে কোনো আলোকপাত করা হয়নি। গণমাধ্যমে যে খবরটি এসেছে, সেই খবরের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে চায় গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে র্যাব কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।’
‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় র্যাবের অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ বা সশস্ত্র মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র্যাবের যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে বা র্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের যে ঘটনা ঘটে এর বাইরে র্যাবে সকল কর্মকাণ্ড দেশের ফৌজদারি আইনের দণ্ডবিধির পাশাপাশি র্যাবের নিজস্ব আইনের আলোকেই একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে থেকেই পরিচালিত হয়।’
প্রতিবেদনে মার্কিন সিনেটররা সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের জোর করে গুম করা ও নির্যাতনের কথা বলেছেন। নির্যাতনের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছিল। সেখানে অভিযোগ, র্যাব ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। এ বিষয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত এবং আপনারা সকলেই জানেন। র্যাব যখন কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বা র্যাব হেফাজতে আনা হয়, এটি করা হয়, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।’
‘আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট থানা বা সংশ্লিষ্ট জেলা কারাগারে প্রেরণের পূর্বে তাকে যথাযথ ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেই আইনের কাছে সোপর্দ করা হয়। অর্থাৎ আমরা যেটাকে বলে থাকি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা। একজন অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে এ পরীক্ষা করানো হয়। এরপর তাকে সংশ্লিষ্ট থানা বা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সুতরাং র্যাবের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে যে অভিযোগ করা হয়েছে এ বিষয়টির বস্তুনিষ্ঠতা এবং গভীরতা আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার দাবি রাখে।’
সুত্র: ঢাকা টাইম্স টুয়েন্টিফোর ডটকম।