★★★★
সিটিজেন জার্নালিস্ট(জিমি):
গত ১২ মার্চ সোমবার নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিনামবন্দরে অবতরণের সময় কো পাইলট পৃথুলা রশিদ নিহত হওয়ায় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের ইলিশপুর গ্রামে তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন । বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার ইলিশপুরে নিহত পৃথুলার আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে এ সমবেদনা প্রকাশ করেন। এ সময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আরিফুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন,কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম মোস্তফা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার প্রমুখ। এদিকে নিহত পাইলট পৃথুলার চাচাতো দাদা মৃত আব্দুল মজিদ মোল্যার ছেলে সম্পর্কে চাচা শহিদুল ইসলাম আলাল সাংবাদিকদের বলেন, পৃথুলার দাদা মৃত আব্দুর রশিদ পূর্ব পাকিস্থানের একজন সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন এবং দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর সংসদের ত্রান মন্ত্রী মাগুরার সোহরাব হোসেনের পি এস ছিলেন। সেই সুবাদে পৃথুলার বাবা আনিসুর রশিদ ওরফে কাজল ঢাকার পীরের বাগে বড় হয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স মাষ্টার্স করে রাশিয়া থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করে বিভিন্ন দেশে চাকুরী করেছেন। পৃথুলার মা আফরোজা বেবী ঢাকা মানিকগঞ্জের মেয়ে। শিক্ষা জীবনে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স মাষ্টার্স করে বর্তমানে আশা এনজিও’র সহকারী পরিচালক হিসাবে নিয়োজিত আছেন। পৃথুলা রশিদের এমন মৃত্যুকে পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারছেন না। একমাত্র সন্তান পৃথুলাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পিতা মাতাসহ স্বজনরা। চাচা আরো জানান, খুব শীঘ্রই ছুটি নিয়ে আমার বাড়ি বেড়াতে এসে আম খাওয়ার কথা ছিলো পৃথুলার। সব মিলিয়ে নেপালে বিমান দূর্ঘটনায় নিহত সহকারি পাইলট পৃথুলা রশিদের গ্রামের বাড়ি ইলিশপুরে স্বজনদের শোকের মাতম চলছে। নিহতের চাচা-মনিরুল ইসলাম ও সহিদুল ইসলাম আলাল বলেন, কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা জাতীয় সম্পদে রুপ নিয়েও শেষ রক্ষা হলো না পৃথুলার। চলে গেল পরপারে। সবার কাছে দোয়া চান তারা। নিহতের চাচী বলেন, প্রায় ১০ বছর পূর্বে পৃথুলা বেড়াতে এসেছিল গ্রামে, এবার বৈশাখ মাসে গ্রামের বাড়িতে আম খেতে আসার কথা ছিল তার, আর আসা হলো না। ছুটিতে এসে ঘুরে ফিরে বেড়াবে স্বজনদের বাড়িতে, অপেক্ষায় ছিল এক সময়ের খেলার সাথী চাচাতো বোনেরা। আর সে ফিরে আসবে না কোন দিন চলে গেছে পরপারে। এসএসসি পরীক্ষা শেষে পৃথুলার জন্যে অপেক্ষায় ছিল বোন উম্মে ইলমা ও উম্মে জান্নাতি। পৃথুলা লন্ডন গ্রেজ এন্টার ন্যাশন্যাল থেকে এবং এ লেবেল অর্জনকারী ঢাকা নর্থ সাউথ বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে এমবিএ এবং আমিব্যাং এভিয়েশন থেকে উড্ডয়ন ডিগ্রী নিয়ে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সহকারি পাইলট হিসাবে ইউএস বাংলা এয়ার লাইন্সে যোগদান করেন। নিহত পৃথুলার দাদার আদি বাড়ী ঝিনাইদাহ উপজেলার শৈলকুপায়। একমাত্র দাদার একমাত্র বোন মৃত্যু বরণ করায় সেখানে আর আসা যাওয়া চলেনা পৃথুলা পরিবারের। তাই ওই সময় থেকে গ্রামের বাড়ী বলতে পৃথুলার চাচাতো দাদা মরহুম আব্দুল মজিদ মোল্যার বাড়ী সাতক্ষীরার ইলিশপুরে। উলেখ,পৃথুলা রশিদ ছিলেন সোমবার বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের সহকারি পাইলট। ১০ জন নেপালি যাত্রীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিরাপদে সরিয়ে নেন তিনি। তাদের বাঁচানোর চেষ্টাকালে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় পৃথুলা রশিদের। জীবনের বিনিময়ে বীর নারী পাইলট পৃথুলা রশিদ ১০ নেপালি যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এজন্য নেপাল ভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে এই বীর নারীকে ‘ডটার অব বাংলাদেশ’ খেতাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
তথ্যঃদৃষ্টিপাত নেট।