চলে গেলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী এমএ জলিল। সোমবার দিবাগত রাতে শহরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি…রাজেউন) মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। কয়েক মাস আগে তার পেটের নাড়িতে অপারেশন করা হয়েছিল। সোমবার বিকালে পুনরায় অসুস্থ হলে তাকে একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত দশটার দিকে আবারও তার অপারেশন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী তথ্য অফিসের উচ্চমান সহকারি লতিফুননাহার লতা এবং দুই পুত্র পাভেল রহমান ও শিহাব রহমান ছাড়াও অগণিত আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষী রেখে গেছেন।
ষাট বছর বয়সী এই কর্মমুখর মানুষটির জীবনে রয়েছে অনেক সমস্যা, যন্ত্রণা, সংগ্রাম ও ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে বেড়ে উঠার এক দৃষ্টান্তমূলক ঘটনাবহুল ইতিহাস। এমএ জলিল অত্যন্ত বন্ধুভাজন, সহজ-সরল, উদার, স্বধীনচেতা, সৃজনশীল, ন¤্র-ভদ্র, বিনয়ী, ধৈর্যশীল ও চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন। শান্তিপ্রিয় সাম্যবাদী এই মানুষটি জীবিকার সন্ধানে আর্টকে পেশা হিসেবে নিলেও মননের প্রয়োজনে আরোপ করেন বিনোদনী অবলম্বনের শৈল্পিক নেশায়। যে সত্ত্বার বহি:প্রকাশ ঘটাতে সাতক্ষীরাতে একমাত্র তিনিই বেশ আড়ম্বরের সাথে তিন বার একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। আর এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদক প্রাপ্ত জাতীয় চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের পরামর্শে সাতক্ষীরা সিকান্দার একাডেমি তাকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করে। পেয়েছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমি পদক। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী দুইপুত্র ও অসংখ্য প্রিয়ভাজন বন্ধু-বান্ধব, গুণগ্রাহী, শুভানুধ্যায়ী, হিতাকাক্সক্ষী সৃষ্টি করে গেছেন। তার মনরাজ্যে প্রবেশ ও আদর-কদরে সকল পথ-মত, বর্ণ, শ্রেণি-পেশার মানুষের ছিলো সমান সুযোগ। যাদের অবাধ সমাগম ও দীপ্ত পদচারণায় মুখরিত ছিলো, আছে ও থাকবে ঈর্ষিকা প্রাঙ্গণ। সব মিলিয়ে ঈষিকা যেন এ জনপদের কাক্সিক্সক্ষত আনন্দযজ্ঞের এক নান্দনিক পাঠশালা। ঈষিকা আর এমএ জলিল যেন সাতক্ষীরার এক অনন্য গর্বের অধ্যায়।
এদিকে এমএ জলিলের মৃত্যুতে গোটা সাতক্ষীরায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে পলাশপোলে তার নিজ বাড়িতে ভিড় করেন শত শত মানুষ। মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা শহিদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা নামাজে অংশ নেন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপি, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম. কামরুজ্জামান, পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী, এনডিসি সজল মোল্লাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। জানাযা নামাজ শেষে কামালনগর সরকারি কবরস্থানে হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরনিন্দ্রায় শায়িত হলেন সাতক্ষীরার প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, ঈষিকা আর্টের সত্ত্বাধিকারী এমএ জলিল। সাতক্ষীরা সর্বমহলে পরিচিত সদাহাস্যোজ্জ্বল মানুষটির এ অকাল মৃত্যুতে গোটা সাতক্ষীরা শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে।
-পত্রদূত নেট।