বিনা অপরাধে আটক কর্মচারি শহিদ হোসেনকে নিঃশর্ত মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ভোমরা স্থল বন্দরের শ্রমিক কর্মচারিরা কর্ম বিরতি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন আমরা বন্দর বন্ধ করিনি। আমরা বন্দরের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকছি।
সোমবার বিকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে ভোমরা বন্দরের বিক্ষুব্ধ শ্রমিক কর্মচারিরা এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষনা দেন। এ সময় তারা বলেন বিজিবি আমাদের কথার মূল্য দেয়নি। উপরন্তু বিজিবির ভোমরা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মুজিবর রহমান তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে বলেছেন ‘ পোর্ট বন্ধ হয়ে গেলে আমার কিছুই যায় আসেনা’।
সংবাদ সম্মেলনে ভোমরা সিএন্ডএফ কর্মচারি এসোসিয়েশন সভাপতি পরিতোষ ঘোষ বলেন আজ সকালে সাউথ বাংলা ব্যাংকে এলসির চার লাখ টাকা জমা দিতে যাচ্ছিলেন নুর এন্টারপ্রাইজের মো. শহিদ হোসেন। এ সময় তার কাছে ব্যাংকের অনুকূলে ভাউচারও ছিল। বিজিবি তার কাছ থেকে তার মোটর সাইকেল এবং টাকাসহ ভাউচারও কেড়ে নেয়।
অভিযোগ করে তিনি বলেন শহিদকে যখন বিজিবি সদস্যরা জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তখন শত শত মানুষ তার প্রতিবাদ জানালেও বিজিবি তাদের কথা শোনেনি। এ সময় তারা দেখতে পান বিজিবি সদস্যরা শহিদের মোটর সাইকেলের সিটের নিচে কি যেনো ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কিছু সময়ের মধ্যে তাকে বিজিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।্্ এ সময় তার সমর্থনে কথা বলার জন্য ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন বিশ^াসসহ বেশ কয়েকজন নেতা ভেতরে ঢুকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ সময় তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেন তারা। তিনি জানান এরপর বিক্ষুব্ধ শ্রমিক কর্মচারিরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তারা এক জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয় যে শহিদ হোসেনকে না ছাড়া পর্যন্ত ভোমরা বন্দরের সব কর্মচারি ও শ্রমিক সংগঠনগুলি কাজ বন্ধ করে দেবে। তিনি বলেন এরপরই দুপুর দেড়টা থেকে শুরু হয় কর্ম বিরতি। ফলে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলি থেকে যেমন পণ্য লোড আনলোড হয়নি তেমনি সংশ্লিষ্ট সব কাজও বন্ধ হয়ে যায়।
পরিতোষ ঘোষ আরও বলেন অফিস কর্মচারিরা কলম বিরতিতে থাকবেন। ট্রান্সপোর্ট শ্রমিকরা কোনো গাড়ি দেবেন না। শ্রমিকরা লোড আনলোড করবেন না। তিনি জানান সব কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় এরই মধ্যে ভারতীয় গাড়ি আসা বন্ধ হয়ে গেছে । যেগুলি বন্দরে ঢুকেছে সেগুলির পন্যও খালাস হচ্ছে না।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন বিজিবি কেবল তাদেরকে নয় যে সব যাত্রী সাধারন ভারত যেতে চান তাদেরকেও রোদে দাঁড় করিয়ে ভোমরা বন্দরে তাদের পাসপোর্ট চেক করে তাদের নাম লিখবার নামে হয়রানি শুরু করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষুব্ধ শ্রমিক কর্মচারিরা বলেন বিজিবির সাথে বারবার কথা হলেও তারা অনড় রয়েছে। তারা নিরীহ কর্মচারি শহিদ হোসেনকে পুলিশে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করায় আমরা কর্মবিরতি ঘোষনা করতে বাধ্য হয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিএন্ড এফ এসোসিয়েশনের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মিজানুর রহমান ও অর্থ সম্পাদক মাকসুদ রহমান খান, সিএন্ডএফ কর্মচারি এসোসিয়েশন সভাপতি পরিতোষ ঘোষ ও সহ সভাপতি আসাদুল ইসলাম, ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল ইসলাম ও সম্পাদক শওকত হোসেন , ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন সভাপতি রমজান আলি ও সম্পাদক পলাশ, লেবার এসোসিয়েশন (১১৫৫) সভাপতি আনারুল ইসলাম, লেবার এসোসিয়েশন (১৬৫৯) সভাপতি এরশাদ আলি, লেবার এসোসিয়েশন (১১২২) সম্পাদক জাহিদ হোসেন, এবং লেবার এসোসিয়েশন ( ১৯৬৪) এর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সহ প্রায় ৫০ জন শ্রমিক কর্মচারি।
অভিযোগ করে তারা আরও বলেন কয়েকদিন আগে বিজিবি সদস্যরা রাজু নামের এক কর্মচারিকে ৬ লাখ টাকাসহ আটক করে ঘোষনা দেয় তার কাছে দুই বোতল ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। বেশ কিছুদিন কারাবাসের পর রাজু বাড়ি ফিরেছে। তারা বলেন বিজিবি সীমান্তের নিরাপত্তা প্রহরী। অথচ তাদের হাতে আমরা মোটেও নিরাপদ থাকতে পারছি না। জনস্বার্থে এর প্রতিকার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন শ্রমিক কর্মচারি নেতারা।
শ্রমিক কর্মচারিরা জানান তাদের কর্মচারিকে কোনো শর্ত ছাড়াই ছেড়ে না দেওয়া হলে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।