ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম(বার) বলেছেন, ঢাকা মহানগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি হবে রোল মডেল। ঢাকা মহানগরীকে যানজটমুক্ত, মাদকমুক্ত এবং সুশৃঙ্খল নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে ডিএমপি বদ্ধপরিকর। বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম আরো জোরদার করে ঢাকা মহানগরীকে নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর আজ সোমবার (২ অক্টোবর ২০২২ খ্রি.) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘কমিশনার’স মিট দ্য প্রেস’-এ একথা বলেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৬তম কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপির প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ট্র্যাডিশনাল ক্রাইম থেকে ডিএমপির ক্রাইমের ধরন আলাদা। নতুন ধরনের ক্রাইমের অভিযোগ আসছে ডিএমপিতে। এর বড় কারণ প্রযুক্তি। সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় ডিএমপি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। ডিএমপির দক্ষতা ও যোগ্যতা অনেক বেশি।
যানজট নিরসনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা নিঃসন্দেহে যানজট। ক্রমবর্ধমান গাড়ির চাপ, রাস্তার স্বল্পতা এবং জনসংখ্যার চাপের কারণে যানজট কমানো যাচ্ছে না। যানজট কমাতে আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা প্রয়োগ করবো। ঢাকার যানজটপূর্ণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে স্পট ধরে ধরে সমস্যা সমাধান করা হবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে ট্রাফিক বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহরে কিছু উন্নয়ন কাজ চলছে। এই উন্নয়ন কাজ শেষ হলে অনেকাংশেই যানজট কমে যাবে। আগে কেউ চিন্তা করতে পারত না যে, এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট ১০ মিনিটে আসতে পারবে। এখন তা সম্ভব হচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২ কোটি ২৪ লাখ মানুষের জন্য ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছে, যা নিতান্তই কম। তারপরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। দেশে আদালত, বিচারিক প্রক্রিয়া আছে। যেসব অপরাধী জেল থেকে বের হচ্ছে তাদের কঠোর মনিটরিং করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরাধী ছোট হোক বড় হোক, কাউকে ছাড় নয়। কেউ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সেই সক্ষমতা ডিএমপির রয়েছে। রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে যা যা করা প্রয়োজন সবকিছুই করবে ডিএমপি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আসন্ন নির্বাচনে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বা এ ধরনের যেকোন কিছু করতে না পারে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট সাহস ও শক্তি ডিএমপির রয়েছে। রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে যা যা করা প্রয়োজন সবকিছুই করবে ডিএমপি।
পুলিশী সেবার মান বাড়ানোর জন্য ‘মেসেজ টু কমিশনার’ চালু করা হবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নগরবাসীকে আইনী সহায়তা দিতে ডিএমপি বদ্ধপরিকর। থানায় গিয়ে কেউ আইনী সহায়তা না পেলে জোনাল এসি-এডিসি, উপ-পুলিশ কমিশনার, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের কাছে যাবেন। এরপরও কেউ সহায়তা না পেলে সরাসরি ডিএমপি কমিশনারের কাছে ম্যাসেজ দিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। থানায় এসে কেউ যেন তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে না যান সেজন্য সব পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, একটি দেশ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এটা তার নিজস্ব বিষয়। আমি কমিশনার হিসেবে যোগদান করে আমার পুলিশের ভেতরে এটা নিয়ে এরকম কোনো চিন্তার বিষয় দেখি নাই। এটি একটি ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যবস্থা। সংগঠন পর্যায়ের কোনো ব্যবস্থা নয়। সংগঠন হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময়ই ঢাকাবাসীর জন্য এবং ঢাকার জনগণের জন্য, নিরাপদ ঢাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের কারও বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ আসে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকেও বিরোধী দলের একটি কর্মসূচি রয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। আমরা যেভাবে অনুমতি দিয়েছি সেভাবেই তারা কাজ করছে। কোনো সংগঠন যদি অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করতে চায়, ডিএমপির অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ছিনতাই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। মোহাম্মদপুর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা কমিয়ে আনতে পুলিশের প্রচেষ্টা রয়েছে। একটি টাস্কফোর্স তৈরি করে ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ের ট্রাফিক যানজটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্পট ধরে ধরে সমাধান করা হবে। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় এখনই ট্রাফিকের এডিশনাল কমিশনারকে বলবো জায়গাটা টুকে রাখতে। আজকে বিকেলে ওই জায়গা এডিসি-এসি ভিজিট করবে এবং রিপোর্ট দেবে। সেখানে কি কি সমস্যা রয়েছে। আগামীকাল থেকে সেটির সমাধান আমি চাই। সংবাদ সম্মেলনের শেষে ট্রাফিকের এডিশনাল কমিশনার সেই সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে বুঝিয়ে বললে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
মাদক নিয়ন্ত্রন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রনে কেবল পুলিশ নয়, পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে। ডিএমপির ৫০টি থানা প্রতিনিয়ত মাদক নিয়ন্ত্রণ ও মামলা করছে। আমার আপনার সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মিশে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবার, সমাজকর্মী ও জনপ্রতিনিধি সচেতন হলে মাদক নিয়ন্ত্রন সহজ হবে।
তিনি আরো বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাইবার মনিটরিং বাড়ানো হচ্ছে। গুজবের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এসময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্,অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার); যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, হাবিবুর রহমান, বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)ডিএমপির ৩৬তম পুলিশ কমিশনার হিসেবে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রি. যোগদান করেছেন।