♠♠♠
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দেশ থেকে মাদক নির্মূল করার আহ্বান জানিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক ও র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেছেন, গডফাদার ও গডমাদারদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে। ২৯ জুলাই, ববিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে প্রণীত অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন’ শীর্ষক কর্মশালায় বেনজীর এ কথা বলেন।
‘কক্সবাজারে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন। কক্সবাজারে গত ১০ বছরে মাদকের বিরুদ্ধে কোনো সাংবাদিকের কোনো রিপোর্ট দেখিনি। অনেকে বলেন, গডফাদার ও গডমাদারদের ভয়ে তারা রিপোর্ট করতে পারে না। আমি বলব, এখন রিপোর্ট করতে লোক পাঠান, রিপোর্ট করেন। আমরা গডফাদার ও গডমাদারদের হাত ভেঙে দেবো’, বলেন বেনজীর।
র্যাবের ডিজি বলেন, ‘সাংবাদিকতা শুধু ডিনার টিকেট পাওয়ার সুযোগ নয়; এখানে নীতি-নৈতিকতার একটা বিষয় আছে, দায়বদ্ধতার একটা জায়গা আছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আপনাদের মাদকের বিরুদ্ধে লিখতে হবে। যেভাবে দেশকে জঙ্গিমুক্ত করেছি, সেভাবে দেশকেও মাদকমুক্ত করব। এটা করা সম্ভব। পৃথিবীর কোনো দেশ মাদকমুক্ত নয়। একটু হলেও মাদকের ব্যবহার আছে। তবে আমরা চাইলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
কক্সবাজারে আটটি উপজেলা আছে। প্রয়োজনে আটটি উপজেলায় আলাদা আলাদা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। মাদকের জন্য জনসংখ্যার ভয়াবহতাও দায়ী। শুধু ঢাকা শহরেই জনসংখ্যা দুই কোটি।
পক্ষান্তরে পুরো অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা দুই কোটি। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশাল একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন বেগ পেতে হয়, শুধুমাত্র ঢাকার জন্য একই বেগ পেতে হয়।’
মাদকের মামলায় আটক আসামিদের জন্য বিশেষ কারাগার স্থাপন করার সুপারিশ করেন র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে এসব বন্দীদের জন্য বিশেষ জেল করার। বঙ্গোপসাগরের কোনো দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোনো জায়গায় সে জেল হতে পারে। যেখানে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ আসামি রাখা যাবে।’
বেনজীর অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ আদালত গঠনের সুপারিশও করেন।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘৩ মে থেকে আমরা যখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, সে সময় অনেকেই সমালোচনা করেছেন। এখন তারা চুপ হয়ে গেছে। আমরা স্পষ্ট কথায় বলে দিচ্ছি, কারো কোনো সমালোচনার আমরা ধার ধারি না।’
মাদক আইনে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘মাদকের সাথে জড়িতদের পানিশমেন্ট হতে হবে। মাদক বিক্রয়, সেবন-সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজার বিধান থাকতে হবে।
বর্তমানে যদি ৬০ লাখ মাদকসেবী হয়, তাহলে প্রতি ১৬ জনে একজন। তারা প্রতিদিন যদি একটি করেও ইয়াবা সেবন করে, তাহলে ১৮০ কোটি টাকা, আর বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকা।
এর বাইরে হিরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল মিলে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য। বর্তমানে যুদ্ধটা হচ্ছে সাপ্লাই কাট পর্যায়, ডিমান্ড কাট আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
মাদকে একমাত্র শাস্তি হতে হবে মৃত্যুদণ্ড। মাদক বিক্রয়, সেবন-সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজার বিধান থাকতে হবে মৃত্যুদণ্ড।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) আয়োজনে কর্মশালায় ১৬টি মন্ত্রণালয়ের ৫০ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অংশ নেন। অ্যাকশন প্ল্যান উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের (মাদকদ্রব্য অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব আতিকুল হক।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ডোপ টেস্টের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়ও ডোপ টেস্টের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযান চলবে।’
সভাপতির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সারা দেশে সাড়ে ৪০০ অপারেশনাল ফোর্সসহ মোট জনবল প্রায় ১৭০০। আর যানবাহন রয়েছে ৫১টি। তবে সরকার আরও ৫০টি যানবাহন এবং জনবল আট হাজারে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের সক্ষমতা খুবই কম। তাই আমরা বিজিবি-কোস্টগার্ড, র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী।