মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর গ্রামে প্রতারণা করে বাবার সাথে জমি লিখে নিয়ে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় হাশেম আলী নামের এক ব্যাক্তি।
দির্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজন চেষ্টা করেও বাবা মাকে বাড়িতে তুলে দিতে পারেননি এমনকি জমিও ফেরত নিয়ে দিতে পারেননি। অবশেষে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে ওই বাবা-মা জমি ফিরে পেলেন এবং সেই জমিতে সরকারি ভাবে ঘর নির্মানের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক।
সোমবার দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি সরেজমিনে গিয়ে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এসময় মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার, মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু, সহকারী কমিশনার মহিদুল ইসলাম, কোমরপুর আইসি ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই দেবাশীষ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ছিলেন।
জানা গেছে, কোমরপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাশেম আলী জমি নেওয়ার জন্য দির্ঘদিন ধরে বাবা-মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করে আসছিল। ছেলের অত্যাচারে বাবা তার নামে এক শতক জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে চেয়েছিল। ওই সুযোগে হাশেম আলী ছলচাতুরী করে বাবা-মায়ের পুরো তিন শতক জমি লিখে নেয়। পরে জমি রেজিষ্ট্রি হয়ে যাওয়ার পর বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাবা-মায়ের ঘর ভেঙে দেয় সেখানে পাকা বাড়ি করার জন্য। এঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় মে¤^ারসহ এলাকার লোকজন কয়েকদফা মিমাংসা করে হাশেম জমি ফেরত দিতে বললেও সে জমি ফেরত না দিয়ে বাবা-মাকে অত্যাচার করতো।এমনকি আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে।
এদিকে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হাশেমের মা সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন।
জেলা প্রশাসক তাৎক্ষনিক মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ কে ঘটনাস্থলে অভিযান চালান। অভিযোগের সত্যাতা পেয়ে হাশেম আলীর সাথে কথা বলে বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। হাশেম আলী জেলা প্রশাসকের কথা মত আগামি বৃহস্পতিবার বাবার নামে দুই শতক জমি লিখে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং বাবা-মায়ের কাছে হাতজোড় ক্ষমা প্রার্থনা করে।
হাশেম আলী এসময় বলেন, আমি ভুল করে ছিলাম। বাবার নামে দুই শতক জমি লিখে দেব। বাবা-মায়ের সাথে আরো কখনো খারাপ ব্যবহার করবো না।
বাবা আবুল কাশেম বলেন, তিন বছর ধরে ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। তার মামলায় আসামিও হয়েছি। আর সহ্য করতে পারছিনা বলে কেঁদে উঠেন।
মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু বলেন, দির্ঘদিন ধরে কোমরপুর গ্রামে হাশেম আলীর সাথে তার বাবা মায়ের দ্বন্দ চলছিল। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মিমাংসার জন্য কয়েকবার তাদের সাথে বসেছি। তারপরও কোন সমাধান হয়নি। পরে আজ জেলা প্রশাসক মহদোয়েরর হস্তক্ষেপে দির্ঘদিনের এই দ্বন্দ নিরসন হলো। আজ থেকে তারা একই সাথে বসবাস করবে।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি বলেন, হাশেম আলী প্রতারণা করে তার বাবার সাথে জমি লিখে নিয়ে বাবা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। তার মা আমাদের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মুজিবনগর ইউএনও, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে মিমাংসা করে দেওয়া হয়। আগামি বৃহস্পতিবার হাশেম আলী তার বাবার নামে দুই শতক জমি লিখে দেবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে তার ওই জমিতে ঘর নির্মান করে দেব।