জাহিদ হোসেন:সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মেরিনা আক্তার বলেছেন, নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে বৈধ হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, নোটারী পাবলিক কারো বিয়ে করাতে পারেনা বা কাউকে তালাক করাতে পারে না। নোটারী পাবলিক কোন সার্টিফিকেট না। নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বয়স বাড়ানো এবং বিয়ের কোন বৈধতা নেই।’
‘জঙ্গি-মাদক প্রতিকারে, জনতা পুলিশ এক কাতারে’ ‘পুলিশকে সহায়তা করুন, পুলিশের সেবা গ্রহণ করুন’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল বুধবার(২৯মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়া থানার আয়োজনে ‘ওপেন হাউজ ডে’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, জিডি করতে আসলে অবশ্যই জিডি হবে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করা এবং জনগনের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশের।
সম্প্রতি কলারোয়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতার উপর হামলা ও হাতের আঙুল কর্তনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি নিয়ে আমাদের আইজি স্যার পর্যন্ত কনসার্ন। অনেক উচ্চ মহল হতে আমাদের উপর প্রেসার এসেছে। আমরা কাজ করেছি। ইতিমধ্যে দু’জন আসামী আটক হয়েছে। বাকি আসামীগুলো অতি সত্তর ধরা পড়বে। আমি এ বিষয়ে ওসি সাহেবকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাবো।
ক্ষমতাশীল দলের এক নেতাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনি যতবড় পদেই থাকুন না কেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার মতো কোন কাজ করেন তবে আপনাকেউ ছাড় দেওয়া হবে না।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের আপনারা ধরে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মাদকের সাথে কোন আপোস নেই। মাদক ব্যবসায়ীদের জায়গা শুধু কলারোয়ায় নয়, সমগ্র সাতক্ষীরায় তাদের জায়গা হবে না। কারন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স জানিয়েছেন।
সংখ্যালঘুদের প্রতি আপনারা সহানুভূতিশীল হতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের অনেক ভয়ে থাকে, তাদের উপর কোনভাবেই নির্যাতন করা যাবে না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য তাদের সহযোগিতা দরকার। সংখ্যায় কম হলেও তারা অনেক উচ্চ ফরমে কথা বলতে পারে। সংখ্যালঘুদের পিছে লেগে নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করা যাবে না।
উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জমিজমা, পারিবারিক বিরোধ সংক্রান্ত শালিশ ভিলেজ কোর্ট ও পুলিশিং ফোরামের মাধ্যমে মিমাংসা করলে পুলিশের উপর হতে চাপ কমে যাবে এবং পুলিশ তাদের রেগুলার কাজগুলো সময়মত করতে পারবে।
‘টাকার বিনিময়ে মামলার তদন্ত রিপোর্ট মিথ্যা করানো হয়’ স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মেরিনা আক্তার বলেন, আমাদের পুলিশের যদি কোন তদন্তে ত্রুটি থাকে অথবা কেউ যদি টাকার বিনিময়ে তদন্তে গরমিল করে সাথে সাথে আমাদের জানান। অথবা সরাসরি আইজি কমপ্লেন সেলে কমপ্লেন করেন কিংবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে জানান। যদি কেউ সত্যি সত্যি টাকা নিয়ে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুনীর-উল-গীয়াসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু।
এ সময় তিনি বলেন, পাঁচ বছরে কলারোয়ার মানুষের মনে অনেক দুঃখ, ক্ষোভ বাসা বেঁধেছিল। এবারের উপজেলা নির্বাচনে নিরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে তারা তাদের সেই ক্ষোভ ও চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। অন্যান্য উপজেলার চেয়ে কলারোয়া উপজেলা বর্তমানে অনেক শান্ত। সকলকে সাথে নিয়ে কলারোয়া উপজেলাকে মাদকমুক্ত, বাল্য বিবাহমুক্ত একটি সুন্দর মডেল উপজেলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) রাজিব হোসেনের সঞ্চালনায় আরো বিশেষ অতিথি ছিলেন কলারোয়া উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এম.এ ফারুক, উপজেলা ওয়ার্কাসপার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স.ম মোরশেদ আলী ও কলারোয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক এমএ কালাম। যুগিখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল হাসান, কেড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল, জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান শামছুদ্দীন আল মাসুদ বাবু, সোনাবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মনিরুল ইসলাম, চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি, কেরালকাতা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ সরদার, কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন, কুশোডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আসলামুল আলম আসলাম, দেয়াড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মফেসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন কলারোয়া থানা মসজিদের খতিব আসাদুজ্জামান ফারুকী ও গীতা থেকে পাঠ করেন থানার এসআই পিযুষ কান্তি ঘোষ। মেরিনা আক্তার উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে তাদের খোলামেলা আলোচনা, অভিযোগ, পরামর্শ শুনেন এবং সমাধানে তাৎক্ষনিক নির্দেশনা প্রদান করেন।