পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, শুধু অভিযান চালিয়ে, মামলা দিয়ে ও গ্রেপ্তার করে দেশ থেকে মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের জনসাধারণের সম্মিলিত উদ্যোগ। তাঁর ভাষ্য, জনতার সহযোগিতা ছাড়া উন্নয়নের পথের এ তিনটি বাধা দূর করা সম্ভব নয়।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফরিদপুরে ‘মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশপ্রধান। পুলিশ লাইনস মাঠে এই সমাবেশের আয়োজন করে জেলা কমিউনিটি পুলিশ। এই সভায় মাদক ব্যবসা ও সেবন ছেড়ে দেওয়া ৭৫ জন পুরুষ ও ৮ জন নারীর কর্মসংস্থানের জন্য রিকশা-ভ্যান ও সেলাই মেশিন দেওয়া হয়।
আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর এক অবাক বিস্ময়। এ উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, কিছু কিছু অমানুষ এ উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আমাদের মাদক দিয়ে, সন্ত্রাস দিয়ে, জঙ্গি দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে। তারা চায় না এ দেশের উন্নয়ন হোক।’
আইজিপি বলেন, ‘জনগণের সহায়তায় পুলিশ ইতিমধ্যে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, বর্তমানে আমাদের টার্গেট মাদক নির্মূল করা। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এ যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে চাই। এ জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাহায্য চাই। কেননা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া পৃথিবীতে কোনো দেশের পুলিশ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব তথ্য পাই তার ৯৯ ভাগ তথ্য দেয় জনগণ। এ জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।’
আইজিপি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন টেকসই শান্তি। আর টেকসই শান্তি আসে টেকসই নিরাপত্তা থেকে। পুলিশ জনগণকে টেকসই নিরাপত্তা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় তিনি জানান, গত এক বছরে ফরিদপুরে মোট মামলা হয়েছে ৩ হাজার ১৬২টি। অথচ এর মধ্যে শুধু মাদকের মামলাই হয়েছে ১ হাজার ৬৩১টি।
এ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল DIG জনাব মো: হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। ফরিদপুরে মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে তিন হাজার। এদের সুপথে আনা ও নির্মূলের ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফরিদপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সমাজ থেকে মাদক, জঙ্গি সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব নয়। পাশের ঘরে আগুন লাগলে আমাদেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। আমরা যদি একজন ব্যক্তিকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে সরিয়ে আনতে পারি, তবে সেটা হবে সত্যিকারের দেশপ্রেমের কাজ।’
সভাপতির বক্তব্যে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন খান বলেন, ‘পুলিশের কোনো সদস্য মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার বিরুদ্ধে যদি এ অভিযোগ থাকে, তাহলে তা আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন,গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান, ফরিদপুর কমিউনিটি পুলিশের আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহজাহান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মৃধা, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মোশার্রফ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, ফরিদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো. আকরামুল হক ফকির প্রমুখ।
এর আগে আইজিপি ফরিদপুর পুলিশ লাইনে নারী পুলিশের ব্যারাক, নগরকান্দা থানা ভবন, চন্দ্রপাড়া তদন্তকেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি পুলিশ টেলিকম ভবন, পুলিশ লাইনস মাল্টিপারপাস হল, চিকিৎসক ও নার্সদের ডরমিটরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জিমি, সিটিজেন জার্নালিস্ট, সাতক্ষীরা।
Copyright © 2024 Update Satkhira. All rights reserved.