সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। নামটিই যার আলাদা একটি পরিচয়। এই বর্ণাঢ্য জীবনের মানুষটির জীবনে এবার যোগ হলো আরও একটি বসন্ত।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) গুণী এই অভিনেতার জন্মদিন। ১৯৪৬ সালে ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায় তার জন্ম। বিশেষ এই দিনটি সাদামাটাভাবে পালন করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। তবে এই দিনে মানুষের শুভেচ্ছা-ভালোবাসা ও অভিনন্দন পাওয়াটা দারুণ উপভোগ করেন বলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন দাপুটে এই অভিনেতা।
আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয় জীবন শুরু হয় মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে। দেশের অন্যতম সেরা নাট্য সংগঠন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যুক্ত রয়েছেন। মঞ্চে ‘নূরুল দীনের সারাজীবন’ নাটকে তার অভিনয় এখনো দাগ কাটে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ে।
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে নাটক নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। নূরের নির্দেশিত নাটক ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ চার দশক ধরে মঞ্চায়ন হচ্ছে। এছাড়া ‘গ্যালিলিও’ নাটকে অভিনয় করেও প্রশংসিত হয়েছেন 'বাকের ভাই' খ্যাত এই অভিনেতা।
মঞ্চের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেরও দাপুটে অভিনেতা তিনি। নব্বইয়ের দশকে নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। পরবর্তীতে দেশ টিভির 'কে হতে চায় কোটিপতি' অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি নিজেকে নিয়ে যান নতুন এক উচ্চতায়।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য।
১৯৮২ সালে ডাক্তার শাহীন আকতারকে বিয়ে করেন সাংস্কৃতিক এই ব্যক্তিত্ব। সংসার জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। ছেলে সুদীপ্ত লন্ডনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে দেশে একটি কোম্পানিতে কর্মরত। মেয়ে সুপ্রভা সংসার জীবনে সুখেই রয়েছেন।
জীবনের প্রথমদিকে বাম রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়ান নন্দিত এই অভিনেতা। শ্রেণি-সংগ্রাম, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য তিনি লড়াই-সংগ্রাম করেছেন জীবনের অনেকটা সময়। বহমান স্রোতের আদর্শবান পুরুষ হিসেবে আসাদুজ্জামান নূর পেয়েছেন যশ, খ্যাতি, প্রশংসা, পুরস্কার এবং লক্ষ্য-কোটি দর্শকদের ভালোবাসা।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসে নীলফামারী-২ (সদর) আসন থেকে এ পর্যন্ত টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক’সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গুণী এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
এদিকে প্রিয় অভিনেতার শুভ জন্মদিনে সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি জানিয়েছেন।সাথে সাথে প্রিয় অভিনেতার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।