জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে রাজারবাগের বীর পুলিশ সদস্যদের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। পুলিশই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রথম বুলেটটি ছুঁড়ে ছিলো। ঐদিন রাজারবাগে আত্মহুতি দিয়েছিল অনেক বীর সাহসী পুলিশ সদস্য। কালরাতে সকল শহীদদের স্মরণে প্রতিবছর ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে উদযাপন করা হয় স্বাধীনতার প্রথম প্রহর।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বেদীতে জাতীয় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যৌথ উদ্যোগে প্রদীপ প্রজ্বলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাত ১২ টা ১ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বলন ও “আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে” গানের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। এরপর স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি, বিশেষ অতিথি আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার), ডিজি র্যাব বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার), ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম, ঢাকাস্থ পুলিশের সকল ইউনিটের প্রধানগণ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠশিল্পী ফকির আমলগীরসহ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠান শুরুর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের বড় একটি প্রেরণা ছিল। ২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে প্রথম তারাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আত্মত্যাগ করেছিলেন অনেক বীর পুলিশ সদস্য। তাদের শ্রদ্ধা জানাতেই আজকের এই আয়োজন। আমরা আগামী বছরের পরের বছর স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্তি পালন করতে যাচ্ছি। আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার ডাকে আমরা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি। যে ইতিহাস রচনা হয়েছে, সেটি ছিল আমাদের প্রেরণার উৎস। পাক বাহিনীকে ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ আমাদের যে পথ দেখিয়েছে, আমরা সে পথে গিয়েই জয়ী হয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পুলিশ যে কাজটি দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে করেছিল, ঠিক তেমনিভাবেই সেই কাজটি এখনও করছে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ পুলিশ হবে জনগণের পুলিশ, সেটা হয়েছে।’
রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন ও এখনও জীবিত আছেন তাদেরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে বাংলাদেশ পুলিশ সাংস্কৃতিক পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশনা করেন। আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য শেষে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা করা হয়।
উল্লেখ্য,১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালী জাতির জীবনে এক বিভিষিকাময় রাত নেমে আসে। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাপুরুষের মত তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকসা বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ বাঙালীদের উপর। স্বাধীন দেশের জন্য আন্দোলনরত বাঙালীদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর চালায় ইতিহাসের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ।
প্রতিরোধ হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বুলেটটি ছুঁড়ে ছিলো রাজারবাগের সাহসী বীর পুলিশ। প্রতিরোধে শহীদ হন অনেক পুলিশ সদস্য।
-ডিএমপি নিউজ।