৩২ বছর ৮ মাস ১০ দিনের দীর্ঘ কর্মযাত্রা শেষে অবসরে যাচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে এক আড়ম্বর সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় জানান টিম ডিএমপির সকল স্তরের পুলিশ সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম এর বর্ণিল কর্মময় ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন টিম ডিএমপির সদস্যরা।
সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বিদায়ী কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সকল সরকারি কর্মচারীকে একদিন অবসর নিতে হয়। এর মধ্যে পুলিশের চাকরিটা একটু ব্যতিক্রম, যেখানে দিনরাত ২৪ ঘন্টা ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করতে হয়। হঠাৎ করে সেখান থেকে কর্মহীন হয়ে পড়া মৃত্যুর সমতুল্য।
তিনি বলেন, ডিএমপি বাংলাদেশ পুলিশের একটা সর্ববৃহৎ ইউনিট। এখানে সবসময় দক্ষ ও যোগ্য অফিসারকে পদায়ন করা হয়। এই ইউনিটে প্রায় ১১ মাসের মত কাজ করতে গিয়ে টিম ডিএমপি সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।
বিদায়ী কমিশনার আরো বলেন, একাত্তর থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা দেশটাকে বারবার পিছনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পুলিশের তৎপরতা তাদের সে চেষ্টা রুখে দিয়েছে।
ডিএমপি টিম হিসেবে মহানগরবাসীর জান মালের নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে যেভাবে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে আগামী দিনগুলোতেও নতুন কমিশনারকে সেভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহাঃ আশরাফুজ্জামান বিপিএম; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার); যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
মেধাবী এ পুলিশ কর্মকর্তা ৯ম ও ১০ম বিসিএস-এ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে ১২ তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। গত ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ’র ৩৫তম কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে প্রথমে বগুড়ার ৪-এপিবিএন পরে সিএমপি চট্টগ্রাম এবং খাগড়াছড়ি জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। এএসপি হিসেবে শেষ কর্মস্থল ছিল ডিএমপি ঢাকা। পদোন্নতিক্রমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর, তার প্রথম পোস্টিং হয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি কনফিডেন্সিয়াল শাখায়। তার নিষ্ঠা, বুদ্ধিমত্তা এবং কঠোর পরিশ্রমের কারণে, খন্দকার গোলাম ফারুক ঠাকুরগাঁও, কিশোরগঞ্জ, ঝালকাঠি, জামালপুর এবং ময়মনসিংহ জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে তিনি ডিএমপি ও ঢাকা রেঞ্জ পুলিশে কাজ করেছেন। এরপর ডিএমপিতে অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) হিসেবে কাজ করেন। তিনি রংপুর রেঞ্জ পুলিশ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহীর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ডিএমপি কমিশনার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন শেষে দূরদর্শী নেতৃত্ব সম্পন্ন জনমানুষের আস্থার প্রতীক সফল এ পুলিশ কর্মকর্তা স্বাভাবিক অবসরে যাচ্ছেন।
জনগণের প্রতি তার অসাধারণ এবং অনুকরণীয় সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০৬ সালে এবং ২০১৮ সালে দুইবার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম-সেবা) অর্জন করেন। ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিম-সেবা) লাভ করেন। তিনি ২০১৯ সালে আইজিপি গুড সার্ভিস ব্যাজও প্রাপ্ত হন।
তিনি ২০১৪ সালে “ইন্টারপোল এবং ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ইন্টারন্যাশনাল ল এনফোর্সমেন্ট ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিম্পোজিয়াম” এবং নেপালে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ প্রশিক্ষণসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাস্ট্রসহ অনেক দেশ সফর করেছেন। তিনি ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অ্যাঙ্গোলায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন।
খন্দকার গোলাম ফারুক ১৯৬৪ সালের ১লা অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর থানার ঘাটানদি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৃত খন্দকার হায়দার আলী ও মাতা মোসাম্মৎ ফাতেমা বেগম। তিনি ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (কৃষি) বিষয়ে অনার্স এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং তিনি তিন কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা।