খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড.খ.মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার কর্তৃক সাতক্ষীরা জেলা "সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল" এর শুভ উদ্বোধন।
করোনাকালে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখেও প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে প্রযুক্তি। আবার এটাও বলা হচ্ছে, করোনা–পরবর্তীকালেও মানুষের ব্যক্তি ও পেশাজীবনকে নতুনভাবে প্রভাবিত করবে প্রযুক্তি। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে এবং বাড়বে, ততই হুমকিতে পড়ছে এবং পড়বে সাইবার নিরাপত্তা। অনলাইন ইমপারসনেশন, সোশাল নেটওয়ার্ক প্রতারণা, সাইবার বুলিং, হ্যাকিং সহ অনলাইনে নানা রকম ফাঁদ পেতে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বিশ্বজুড়েই। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশেও এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটছে অহরহ।
বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তথ্য-প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে দেশে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার যত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমগুলোয় এই অপরাধের প্রবণতা বেশি যার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। হয়রানির শিকার হলেও ভুক্তভোগীদের অনেকেই এর বিরুদ্ধে কীভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় সে বিষয়ে জানেন না। প্রতিকারের উপায় নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব এবং লোকলজ্জা ও ভয়-ভীতির কারণে একদিকে যেমন জনসাধারণ বিশেষত নারীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তেমনি ব্ল্যাক-মেইল ও হুমকির কারণে তাদের ব্যক্তিগত জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে৷
উদ্বেগজনক মাত্রায় সাইবার ক্রাইম বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় এনে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বিপিএম (বার) প্রতি জেলাতেই অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পন্ন একটি "সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল" গঠন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। ডিআইজি'র সার্বিক দিকনির্দেশনা মোতাবেক সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) সাইবার অভিজ্ঞ ও যোগ্য পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর একটি "সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল" গঠন করেন।
গত ০৪/১০/২০২১ খ্রিঃ তারিখে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বিপিএম (বার) "সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল" সাতক্ষীরা এর শুভ উদ্বোধন করেন। এই সময় সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার), ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, সাতক্ষীরা এর কমান্ডেন্ট মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জনাব সজীব খান , সকল থানা ও ইউনিটের অফিসার ইন চার্জ সহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা বৃন্দ।
উদ্বোধন পরবর্তী সময়ে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের গঠন, কর্ম পন্থা ও কর্ম পরিধি নিয়ে পুলিশ সুপারের অনুমতিক্রমে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর মোঃ ইকবাল হোসেন ।
তিনি জানান যে, ১০ জন্য সাইবার অভিজ্ঞ ও তথ্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্পন্ন অফিসার উক্ত সেলে কাজ করবে ও তদারককারী অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর মোঃ ইকবাল হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন। উপস্থাপনা শেষে রেঞ্জ ডিআইজি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সাতক্ষীরা জেলার সাইবার সম্পর্কিত সব অপরাধ দমনে আন্তরিক ও নিরলস ভাবে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
কিভাবে কাজ করবে এ ইউনিটঃ
"সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল" জেলা পুলিশের একটি ইউনিট যা জেলার ৮ টি থানায় সাইবার সম্পর্কিত জিডি ও মামলা তদন্ত করবে। এছাড়াও জেলার যেকোনো ব্যক্তি সাইবার অপরাধের শিকার হলে উক্ত সেল এর ইনচার্জ এর নাম্বার (০১৭৬১৭১৮৫৬৬) নাম্বারে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
এক্ষেত্রে অভিযোগকারী নারী নিজের পরিচয় গোপন রেখেও নিজের ওপর সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে তথ্য দিতে এবং প্রতিকার চাইতে পারবেন। ভুক্তভোগী নারীকে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে পুলিশ। সেই সঙ্গে তাকে সাইবার সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হলে, সেক্ষেত্রেও অভিযোগকারীর পরিচয় প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ গোপনীয়তার আশ্বাস দিয়েছে।
কী কী অপরাধ সম্পর্কে অভিযোগ জানানো যাবেঃ
১) ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া
২) ফেসবুক আইডি হ্যাক
৩) ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি
৪) ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়
৫) ব্ল্যাকমেইলিং
৬) ছবি বা ভিডিও এডিট করে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি
৭) সুপার ইম্পোজ ছবি
৮) পর্নোগ্রাফি
৯) ছবি দিয়ে আপত্তিকর কনটেন্ট বা ফেক আইডি তৈরি
১০) সাইবার বুলিয়িং
১১) ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেওয়া
১২) হয়রানিমূলক এসএমএস, মেইল বা লিংক পাঠানো।
সাইবার অপরাধ দমনে জেলা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।
প্রেস রিলিজ।