খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের ধামরাইল গ্রামের কৃতি সন্তান আ. ন.ম তরিকুল ইসলাম। বর্তমানে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন, তারপরও তার এলাকার প্রতি যে টান ও মায়া, সেটা বর্ণনাতীত। করোনার মারাত্মক ছোবলে যখন এলাকাবাসী চরম আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন, ঠিক তখনই তিনি দূর থেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকাবাসীর।
করোনার মারাত্মক ছোবলে যখন গ্রামবাসী মানবেতর জীবন যাপন করছেন, কর্মহীন ও অসহায় মানুষদের এই রোজার সময় সীমাহীন কষ্টে ভুগছেন, ঠিক তখনই আবারও দূর থেকে তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এলাকার কর্মহীন ও অসহায় লোকদের জন্য খাদ্য সামগ্রী তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, বিশিষ্ট সমাজসেবক আমিনুল ইসলাম এলাকার স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন।
২০ মে ৫০টি পরিবারকে ২১মে বাকী ২৫ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়, তার পিতা জানান।
প্রত্যেক টা পরিবারের জন্য বিতরণ করা খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল, চাউল ১০ কেজি, ডাল ১ কেজি, আলু ৩ কেজি, পিয়াজ ২ কেজি, তেল ১ লিটার, রসুন ৫০০ গ্রাম, ছোলা ১ কেজি, লাচ্চি সেমাই ২ প্যাকেট, চিনি ১ কেজি, লবন ১ কেজি।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তরিকুল ইসলাম, উপসচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গ্রামবাসীর পাশে আছেন। এর পূর্বে ও একাধিকবার গ্রামের অসহায় লোকদের আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
এ বিষয়ে ধামরাইল গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন মোড়ল বলেন, ‘এই গ্রামের অনেক লোকের টাকা আছে কিন্তু কেউ কোনো ধরনের সাহায্য সহায়তা করেনা। কেউ খোঁজ খবর ও নেই না। শুধুমাত্র তরিকুল ইসলাম সকল দূঃসময়ে গ্রামের অসহায় লোকদের পাশে দাঁড়ায়, তার টাকা নাই কিন্তু তার একটা মন আছে, অনেক বড় মনের অধিকারী। আরও বলেন আল্লাহ তাকে অনেক বড় করুক যাতে আমাদের গ্রামের অসহায় লোকদের পাশে আরও বেশি দাড়াতে পারে।’
একই গ্রামের বাসিন্দা রফিউদ্দিন বলেন, ‘এই গ্রামের সকল অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো তরিকুল ইসলামের জন্য নতুন কিছু নয়, তিনি সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়ান।’ আরও বলেন, ‘এই করোনার মহাদূর্যোগকালে একাধিকবার আমাদেরকে আর্থিক সাহায্য সহ খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। আল্লাহ তাকে অনেক বড় করুক।’
বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তরিকুল ইসলাম এর পিতা মোঃ আমিনুল ইসলাম আর আমি একই ক্যাম্পের অধীনে একসাথে যুদ্ধ করেছি। তার পিতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং এই অঞ্চলের স্বনামধন্য একজন শিক্ষক ছিলেন।’ তিনি বলেন, তরিকুল ইসলাম অতি সাধারণ জীবন যাপন করেন। তিনি একজন বড় অফিসার কিন্তু গ্রামের সকল স্তরের মানুষের সাথে এমন ভাবে মিশেন, অফিসার সুলভ কোনো আচারণ আমাদের সাথে করেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সকল দূঃসময়ে গ্রামের অসহায় লোকদের পাশে দাঁড়ায়, এবার নতুন নয়। গ্রামের যে কোনো বিষয়ে সর্বাগে তরিকুল ইসলাম কে পাওয়া যায়। আমরা দোয়া করি সে আরও বড় হোক।’
অপর বাসিন্দা আনিছুর রহমান মোড়ল বলেন, ‘তরিকুল ইসলাম গ্রামের অসহায় লোকদের সাহায্য সহযোগিতা করা সহ এলাকার লোকজনদের সব ধরনের সমস্যায় তাদের পাশে দাঁড়ান। সকল সময়ে তাকে পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধামরাইল গ্রামে ৫০ বছর চেষ্টা করে কেউ খেলার মাঠ করতে পারেননি, কিন্তু তরিকুল ইসলাম তার একক প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহৎ ফুটবল মাঠ তৈরি করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মাদকের আখড়া উচ্ছেদ করে সেখানে মাঠ তৈরি করে দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধামরাইল গ্রামে দক্ষিণ পাড়ায় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে বড় জামে মসজিদ তৈরি করে দিয়েছেন বিদেশি সংস্থার সহযোগিতায়। তার এলাকার প্রতি যে টান, আকর্ষন, সেটা বিরল। আমরা ধামরাইল গ্রামবাসী তার জন্য গর্ববোধ করি।’
এ বিষয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঐ গ্রামে আমার জন্ম, আবার ঐ গ্রামের মাটি হবে আমার স্হায়ী ঠিকানা। গ্রামের আলো, বাতাস, ধুলা, মাটিতে আমার বেড়ে উঠা, তাই আমি ঐ গ্রামের কাছে অনেক ঋণী। তাই চেষ্টা করি গ্রামের যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার এবং গ্রামবাসীর দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর, তাতে হয়তোবা ঐ ঋনের কিছুটা অংশ কমবে বলে আমি মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুব ছোট্ট একটা চাকরি করি, তাই আমার কিছু করার ক্ষমতা নাই, তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা টা করতে পারবো গ্রামের যে কোনো উন্নয়নমূলক বিষয়ে। আর আল্লাহ আমাকে যে টুকু সামর্থ্য দিয়েছে, তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি গ্রামের অসহায় লোকদের আর্থিক সাহায্য করতে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন এটাই আমার চাওয়া। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের দোয়াই হবে আমার জীবনে চলার পথের পাথেয়’।
তরিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ সারাটি জীবন যেন মানবসেবা করে যেতে পারি । মানুষের সেবা করতে পারা সৌভাগ্যের বিষয় বলে মনে করি ।