শেখ আরিফুল ইসলাম(আশা): যখন তখন যেখানে সেখানে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বখাটে যুবক মেহেদি হাসান। যুবকটির কারণে সে স্কুলেও যেতে পারছিল না। সর্বশেষ তাকে এসিড মারা হুমকি দিয়েছিল। সকালে তাকে ধাওয়া করেছিল সেই যুবক।
এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পায়নি সে। অবশেষে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে স্কুল ছাত্রী চাঁদনী সমাজের কাছে নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে গেল।
সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের বাগানবাড়ি এলাকায় নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বখাটে মেহেদিকে গ্রেফতার করেছে। আত্মহত্যাকারী আসফিয়া খাতুন চাঁদনী বাগানবাড়ির জোহরা খাতুনের মেয়ে। স্থানীয় কারিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সে। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ছাত্র বখাটে মেহেদি এর আগেও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার নানা ঘটনা ঘটিয়ে জুতাপেটা খেয়েছিল। তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগও রয়েছে।
এদিকে বারবার তাকে উত্ত্যক্ত করে আত্মহননের পথে ঠেলে দেওয়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার তার স্কুল মাঠে ছাত্র শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন। এই মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান। মানববন্ধন থেকে ঘটনার বিচার দাবি করা হয়।
মেয়েটির মা জোহরা খাতুন জানান প্রতিদিনই মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতো একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে মেহেদি হাসান। আগের রাতে এসিড মারার হুমকি দিয়েছিল। সোমবার সকালে সে প্রাইভেট পড়ে আসার সময় আবারও তাকে ধাওয়া করেছিল মেহেদি। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। এমনকি মেয়েটি স্কুলে যাওয়াও এক রকম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এবার সে আর প্রতিবাদ নয়, তাড়া খেয়ে সরাসরি ঘরে যেয়ে সবার অজান্তে আড়ায় গলায় ওড়না জড়িয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এ ঘটনায় তার স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জেলার বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেছে।
চাঁদনীর মা আরও জানান মেহেদির বিরুদ্ধে উত্ত্যক্তের অভিযোগ জানাতে চাঁদনী জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করেছিল রোববার। জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই অভিমানী চাঁদনী নীরব প্রতিবাদ করে চলে গেল। ঘটনার রাতেই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মেয়েটির বাড়িতে যান। তারা তার স্বজনদের সাথে কথা বলে সমবেদনা জানান এবং বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রতিশ্রুতি দেন।
তার কাছে মেয়েটি অভিযোগ জানিয়েছিল কিনা তা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, তিনি মিটিংয়ে আছেন। এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন। তবে ফেইস বুকে এক স্ট্যাটাসে জেলা প্রশাসক বলেন ‘চাঁদনীর আত্মহত্যা আমাদের বিবেকের দংশন ও ব্যর্থতা, আমাদের জেগে ওঠার প্রেরণা’। এর আগে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন তিনি অভিযোগ শুনে বিষয়টি পুলিশকে জানান এবং দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটরে সাথে কথা বলতে বলেন।
কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই সে শেষ হয়ে গেল।
এদিকে আজ মঙ্গলবার কারিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা উত্ত্যক্ত করে চাঁদনীকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়ার দায়ে মেহেদি হাসানের বিচার দাবি করেন। মানববন্ধনে নেতৃত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন ‘মেহেদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে’। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা শিক্ষা অফিসার আল মামুন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক আজিজুল ইসলাম, শিক্ষক আবদুল হক, আবদুল মালেক, রুস্তম আলি ও ছাত্র ছাত্রীরা।