♠♠♠♠
পুলিশ কর্মকর্তাদের সড়কের নিরাপত্তায় আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত কয়েকদিন পুলিশ সদর দফতরে বিভিন্ন রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) রংপুর ও বরিশাল রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক হয়েছে।একইসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
মহাসড়কে যাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, নসিমন ও করিমনসহ ছোট যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেজন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহাসড়কে বড় যানবাহনের সঙ্গে ছোট যানবাহনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে ।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের পর সড়কের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের প্রায় সব ইউনিট সড়কের নিরাপত্তায় মাঠে নেমেছে। সড়ক ব্যবহারে পথচারী, যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকসহ সব পক্ষের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন প্রয়োগে কঠোর হচ্ছে পুলিশ। গত কয়েকদিন যাবত পুলিশ সদর দফতরে বিভিন্ন রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আইজিপি। এসব বৈঠকে নেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, গাড়ির ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন এবং চালকের লাইসেন্স না থাকলে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।
ঈদুল আজহার আগের তিনদিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের তিনদিনের একটি চিত্র পাওয়া যায় পুলিশ সদর দফতর থেকে। এই সাতদিনে মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৯টি। এসব দুর্ঘটনায় ৮০ জন নিহত ও ১০৫ জন আহত হয়েছে। বাস ও ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছে ১৮ জন। ব্রেক ফেল করে দুর্ঘটনায় পড়েছে দুটি যানবাহন। এতে মারা গেছে তিনজন। সাতটি দুর্ঘটনায় সাতজন পথচারী নিহত হয়েছে। অন্য দুর্ঘটনাগুলো হয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা ও ইজিবাইকের সঙ্গে বাস ও ট্রাকের। এসব দুর্ঘটনায় অন্যরা মারা যায়।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সড়ক নিরাপত্তায় আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং বানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যানবাহনের গতি যাতে অতিরিক্ত না থাকে সেজন্য রাস্তায় স্পিড গান (গতি পরিমাপ যন্ত্র) ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্ধারিত গতির বেশি পাওয়া গেলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে পুলিশ কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতার কাজ করছেন। ট্রাফিক সপ্তাহে যেভাবে স্কাউট, গার্লস গাইডসহ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ করা হয়েছে সেভাবে কাজ করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানতে পারে।
সড়ক নিরাপত্তায় পুলিশের সাম্প্রতিক তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউন কে বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। আরও হবে। এগুলো নিয়মিত বিষয়। আইন প্রয়োগ করে রাতারাতি সড়কে নিরাপত্তা আনা যাবে না, সময় লাগবে। তবে সড়ক নিরাপত্তায় জনসচেতনতার কোনও বিকল্প নেই।’ তিনি বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই দোষ পুলিশের ওপর দেওয়া হয়। কিন্তু নিজে থেকে সচেতন হয় না কেউ। তাই পুলিশ আইন প্রয়োগে যেমন কঠোর হচ্ছে, তেমনি সচেতনতামূলক কাজও করে যাচ্ছে।’
মহাসড়কের যেসব জায়গায় সিএনজিচালিত যানবাহন, লেগুনা ও ইজিবাইক ছাড়া যাতায়াতের আর কোনও বিকল্প বাহন নাই সেক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত- জানতে চাইলে ডিআইজি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইচ্ছা করলেই বিকল্প বের করা যায়। তারপরও দেশের প্রায় তিন হাজার আটশ’ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে একশ’কিলোমিটারের মতো এমন জায়গা রয়েছে যেখানে স্বল্প পাল্লার বাস চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
পুলিশ সদর দফতরে নবগঠিত ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এআইজি মোশাররফ হোসেন মিয়াজি বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তায় পুলিশ ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ বৈঠক ছাড়াও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কাজও চালানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, মহাসড়কে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই ঘটছে বড় যানবাহনগুলোর সঙ্গে ছোট যানবাহনের। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার ২৫ ভাগই হচ্ছে আইন না মানার কারণে। সেজন্য মহাসড়কে যাতে ছোট যানবাহন চলতে না পারে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
গত ২০ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলে এ প্রচেষ্টা আরও বেশি টেকসই ও ফলপ্রসূ হবে।