বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন মানুষের নিত্যসঙ্গী। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও রুচি অনুযায়ী মানুষ বিভিন্ন ব্রান্ড ও মডেলের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু চলার পথে প্রায়ই নানা কারণে প্রয়োজনীয় ফোনটি হারিয়ে যায় বা যেতে পারে। চুরি বা ছিনতাইয়ের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে অনেক সময়।
চুরি বা ছিনতাই হওয়া এসব মোবাইল ফোন অনেক সময় অপরাধমূলক কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু মোবাইল এবং সিমের রেজিস্ট্রি যে ব্যক্তির নামে থাকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এতে প্রকৃত অপরাধী ধরাছোয়ার বাহিরে থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অথাৎ যার মোবাইল খোয়া যায় অনেক সময় তাকেই ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। তাই মোবাইল ফোন হারালে বা চুরি বা যে কোন ভাবে খোয়া গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পিপিএম (বার)।
পুলিশ সুপার বলেন, যেকোনভাবে খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। গত তিন মাসে জেলা পুলিশ ৮০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে আরও প্রায় ১০০টি মোবাইল ফোন উদ্ধারের কাজ চলমান রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছরের মে মাসে ২০টি, জুন মাসে ৩২টি এবং জুলাই মাসে ২৮টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনের মধ্যে-আই ফোন, স্যামসাং গ্যালাক্সি, স্যামসাং গ্যালাক্সি ট্যাব, ভিভো, অপপো, এক্সমি, রেডমি, রিয়েলমি, সিমপোনি, ভিশন ও পোকোসহ বিভিন্ন দামি ব্রান্ডের মোবাইল ফোন রয়েছে। এসব ফোনের বর্তমানে আরও প্রায় ১০০টি মোবাইল উদ্ধারে কাজ চলমান।
সাতক্ষীরা জেলায় বর্তমানে মোবাইল ফোন উদ্ধার কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, মূল্যবান মোবাইল ফোনটি হারিয়ে গেলে বা ছিনতাই হলে বা যেকোনভাবে খোয়া গেলে নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটা সাধারণ ডায়রি করতে হবে। এসময় আপনার মোবাইল ফোনটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন: ক্রয়ের রশিদ, সিম রেজিস্ট্রেশন, ফোনের আইএমই নম্বর, ফোনের সক্রিয় সিমের নাম্বার প্রভৃতি কাগজ অথবা এর ফটোকপি জিডির সাথে থানায় জমা দিয়ে হবে। থানার ডিউটিরত অফিসার আবেদনকারীকে একটি জিডি নাম্বার প্রদান করে তদন্তের জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার মোবাইল উদ্ধারের জন্য খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনের আইএমইআই ও সিম নাম্বরের সিডিআর ও ট্র্যাকিংয়ের জন্য পুলিশের বিশেষ ইউনিট এলআইসি শাখায় প্রেরণ করেন। এলআইসি শাখা প্রযুক্তির মাধ্যমে খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনের কল ডিউরেশন রেকর্ড (সিডিআর) ও অবস্থান নির্ণয় করতে পারেন।
সিডিআর রিপোর্ট পাওয়ার পর দায়িতপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার মোবাইল উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করেন। তিনি সিডিআর পর্যালোচনা করে মোবাইল ব্যবহারকারীর বায়োডাটা সংগ্রহ করে। এমনকি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর নিখুত অবস্থানও খুঁজে বের করেন। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর অবস্থানের সকল বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর অপারেশনাল কার্যক্রমের মাধ্যমে মোবাইলটি উদ্ধার করেন।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগে। কারণ খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি সাথে সাথেই ব্যবহার শুরু হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে এসব মোবাইল লক করা থাকে। সে ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনটি চালু করার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ট্র্যাকিং করে উদ্ধার অভিযানে নামে। পরবর্তীতে হারানো মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে আবেদনকারীকে ফেরত দেওয়া হয়। উদ্ধার করতে সক্ষম না হলেও জানিয়ে দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধারে পুলিশের সহযোগীতা নিলে জনগণ অনেক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। হারানো মোবাইল ফোন ফিরে পাওয়া যায়, পুলিশের দ্বারা নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যায়, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, গ্রেপ্তার বা হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন সৃষ্টি হয় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে গ্রাহক রক্ষা পায়।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পিপিএম (বার) বলেন, বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকের মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে নিকটস্থ থানায় জিডি করে বিনামূল্যে এই সেবা নিতে পারে। সারা বছরই মোবাইল ফোন উদ্ধারের কাজ চলমান থাকে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের আইসিটি শাখার একদল চৌকশ কর্মকর্তা জেলার বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের হারিয়ে যাওয়া, চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য নিরলস ও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতি মাসেই বেশ সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশের সহযোগীতা নিয়ে গ্রাহক তাদের হারানো মোবাইল ফোনটি সহজেই খুঁজে যাচ্ছে। এতে মোবাইল চুরির ঘটনাও কমে আসছে।
তিনি আরও বলেন, খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা বেশ কষ্ট সাধ্য। সাধারণত এসব মোবাইল ফোন জেলার বাহিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেক সময় সাতক্ষীরা জেলা থেকে খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন টেকনাফ থেকে উদ্ধার করতে হয়।
পুলিশের অন্যান্য সকল কাজের পাশাপাশি পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি জন্য জেলা পুলিশ বিশেষ গুরুত্বের সাথে এ কাজটি করে যাচ্ছে বলে তিনি বলেন।
সংবাদ দৈনিক পত্রদূতের।