এক হাজার পিস ইয়াবা বড়ি সহ আইন, বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে আটক করেছে যশোর কোতয়ালী পুলিশ। গত রাতে যশোর শহরের ঝুমঝুমপুরস্থ একটি ভাড়া বাসা থেকে কথিত স্ত্রী ও শ্যালকসহ এস এম ফরিদ আহম্মেদ নামের ওই কর্মকর্তাকে আটক করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানান যশোর কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান।
আটককৃত এস এম ফরিদ আহম্মেদ আইন বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রনালয়ের সাবেক উপ সচিব মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন। একটি পারিবারিক মামলায় আটকের পর জেলে যাওয়ার কারনে গত ২ মাস আগে তাকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে মন্ত্রনালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান।
এদিকে যশোরে মাদকসহ আটকের ঘটনায় এস এম ফরিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।
যশোর কোতয়ালী থানায় অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান বলেন, খুলনার ছেলে এস এম ফরিদ ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তিনি ২ সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ২ সন্তানকে নিয়ে আজিমপুরে সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছেন। এস এম ফরিদ আইন বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রনালয়ের সাবেক উপ সচিব মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন।
ওই উপ সচিব পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র বদলী হলে এস এম ফরিদ একাধিক কর্মকর্তার পিও হিসেবেও কাজ করেছেন। সরকারী চাকুরির পাশাপাশি ফরিদ নাট্যাঙ্গনের সাথেও জড়িত। তিনি বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশনে নাটক করে থাকেন। এই নাট্যাঙ্গনের সূত্র ধরে দেড় বছর আগে পরিচয় ঘটে মাগুরার মীরপাড়ার আব্দুল হক মোল্যার মেয়ে তামান্না আক্তার পলির সাথে। পলিও নৃত্য শিল্পী হিসেবে ঢাকায় কাজ করতেন। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই এক বছর আগে বড় স্ত্রীকে গোপন করে পলিকে বিয়ে করেন। ছোট স্ত্রী পলিকে নিয়ে প্রথমে ঢাকার মিরপুরে ও পরে মতিঝিলের রেল কোলনীতে বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে থাকেন এস এম ফরহাদ।
এই দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ের পর থেকে এস এম ফরহাদ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীকে ব্যবহার করে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। আইন বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হওয়ার সুবাধে তিনি অবাধে বিভিন্ন স্থানে বিচরন করার সূত্র দরে প্রায়ই কক্সবাজার যেতেন এবং সেখান থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। তারই সূত্র ধরে চলতি মাসের ১ তারিখে এস এম ফরহাদ ও পলি দম্পতি যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুরে রানার দোতলার বাড়ির একটি ইউনিট মাসিক ৭ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। ওই ভাড়ার বাসা থেকেই গত রাতে কোতয়ালী পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এস এম ফরহাদ, তার স্ত্রী তামান্না আক্তার পলি ও পলির ভাই আলামিনকে আটক করে। এসময় তাদের তিনজনের কাছ থেকে পুলিশ ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় এস এম ফরিদ দাবি করেন তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি বলেন, প্রেমের সূত্র ধরে এক বছর আগে পলিকে তিনি বিয়ে করেন। ওই বিয়ের পর থেকে তার পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনে ঝড় উঠতে শুরু করে। বড় স্ত্রী তার ২ সন্তানকে নিয়ে আজিমপুর সরকারী বাসভবনে বসবাস করছেন। তিনি ছোট স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির কারনে চলতি মাসের প্রথম দিকে যশোরে এসে তিনি বাসা ভাড়া নেন। গত ২ দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে যশোর আসেন। যশোরে তিনি পলির ভাই আলামিনের কাছে এক লাখ টাকা পেতেন। ওই টাকা দেওয়ার কথা বলে তাকে ডেকে এনে পলি ও তার ভাই এবং পলির পুরোনো প্রেমিক রবিন তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
এদিকে ফরিদ আহম্মেদের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষন করে তার দ্বিতীয় স্ত্রী তামান্না আক্তার পলি জানান, এস এম ফরিদ একজন পেশাদার মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী।