দেশের কল্যাণে সাংবাদিকদের গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। একটা কথা আছে যে স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়। বালখিল্য ব্যবহার যাতে কেউ না করে সে দিকেও দৃষ্টি দেওয়া উচিত।” অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত এবং প্রয়াত সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানের এমন মন্তব্য আসে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “যেটা দেশের কল্যাণে কাজে লাগবে, আমি আশা করি আপনারা সেটা করবেন।”
আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাজ করে এসেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা কেউ বলতে পারবে না যে কারো গলা টিপে ধরেছি, কারো মুখ টিপে ধরেছি অথবা কাউকে বাধা দিয়েছিৃ দিইনি, দিই না। বরং সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার আমরা করেছি।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার ‘সাংবাদিক সহায়তা ভাতা ও অনুদান নীতিমালা-২০১২’ প্রণয়ন করেছে; অসুস্থ, অসচ্ছল, আহত এবং প্রয়াত সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছে। এ নিয়ে অষ্টমবারের মত সরকার সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
এ কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৪’ প্রণয়ন করে একটি ট্রাস্টি বোর্ড করা হয়েছে। এই ট্রাস্ট থেকে চলতি বছর সারাদেশের ১১৩ জন সাংবাদিককে ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
আর গত আট বছরে এক হাজার ৩৯৬ জন সাংবাদিককে মোট ১০ কোটি ৭ লাখ টাকা সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ২০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “আমি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছি। এই ফান্ডে আমি কিছু টাকা দিয়েছিলাম। পত্রিকার মালিকরা এই ফান্ডে কোনো টাকা দেননি। মাত্র দুজন টেলিভিশন মালিক ফান্ডে সহায়তা করেছেন। সেখানে এখন ১৪ কোটি টাকা আছে। আমি আরও ২০ কোটি টাকা দেব।” পক্ষে-বিপক্ষে কে কি লিখল- তা নিয়ে চিন্তা করেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি চিন্তা করি, আমি যেটা করছি আমার আত্মবিশ্বাসটা আছে কিনা। আমি সঠিকটা করছি কিনা। আমি আমার আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই চলি।”
তবে সংবাদমাধ্যমে সরকারের কাজের প্রচার নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কাজ করে যাচ্ছি দেশের জন্য। তবে আমি এটা ব্যক্তিগতভাবে বলব, আমি তো কখনো সংবাদপত্রে বা টেলিভিশনে খুব একটা… আমি বলবৃ ভালো প্রচার ওভাবে পাইনি, সহযোগিতা ওভাবে পাইনি।
“হতে পারে সেখানে যারা মালিক হয়ত তাদের কারণে। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক সব সময় রয়েছে। তবে সংবাদপত্রের সঙ্গে পারিবারিক ও ব্যক্তিগতভাবে যে সব সময়ই একটি সম্পর্ক ছিল, সে কথাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। “আন্দোলন সংগ্রাম করতে যেয়ে আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিল। প্রেসক্লাবে যাওয়া, ডালপুরি খাওয়া। সেটাও একটা সম্পর্ক ছিল।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সংবাদপত্রের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যে সংবাদপত্রের লোক ছিলেন সেটা কিন্তু তার আত্মজীবনীতে স্পষ্ট লেখা আছে। সেদিক থেকে আপনারা আমাকে যদি আপনাদের পরিবারের একজন মনে করেন, আমি খুশি হব।”
বেতন-ভাতাসহ সাংবাদিকদের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যার সমাধানে বর্তমান সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি যখন ন্যাম ফ্ল্যাট করেছি, তখন বলেছিলাম কিছু ফ্ল্যাট থাকবে, যেটা হায়ারপারচেজে সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক- তারা নিতে পারবেন। যে কোনো কারণেই হোক, সেটা আর হয়নি।
“আমরা এখন কিছু ফ্ল্যাট করছি, সামান্য টাকা দিয়ে, কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করে এই ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবেন। যারা চান তারা হতে পারবেন। ভাড়া থেকেই মূল্যটা পরিশোধ হবে। প্রতিমাসে ভাড়া হিসেবে যেটা, সেটা মূল্য হিসেবে ধরা হবে। সেভাবে আমরা ফ্ল্যাট দিতে পারব।”
অন্যদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তথ্য সচিব আবদুল মালেক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।